বর্তমান বিশ্বে পর্ন ভিডিও অত্যন্ত
সহজলভ্য। যদিও সরকার এটি নিষিদ্ধ করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু আজও এই ভিডিওগুলি ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করলে সহজেই
পাওয়া যায়। আপনি কি জানেন বিশ্বের প্রথম পর্ন অভিনেত্রী কে ছিলেন, কোন পরিস্থিতিতে সেই অভিনেত্রীকে এই পেশায় প্রবেশ করতে
হয়েছিল?
আজ শুনে নিন সেই গল্প।
১৯৭২ সালে 'ডিপ থ্রোট' নামে একটি সিনেমা
মুক্তি পায়। এই ছবিতে একজন সুন্দরী মেয়ের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে যায় দর্শক। ছবিটি
জনমানসে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করে। এমনকি ‘দ্য নিউ
ইয়র্ক টাইমস’-এ ‘ডিপ থ্রোট’ নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছিল। ছবিটি
সেই সময় প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার (আজকের যুগে ৪ হাজার কোটি টাকা) আয় করেছিল। ‘পুসি ক্যাট থিয়েটার’-এ সারাদিন ১০টি করে শো থাকত এই সিনেমার। সিনেমাটি এত টাকা আয় করলেও অভিনেত্রী
কিন্তু পেয়েছিলেন মাত্র ১২৫০ ডলার। এই টাকাও অভিনেত্রীর স্বামী নিয়ে নিয়েছিলেন।
‘ডিপ থ্রোট’-এর সেই অভিনেত্রীর নাম ছিল লিন্ডা লাভলেস। তিনি ১৯৪৯ সালের
১০ জানুয়ারি নিউ ইয়র্ক সিটির ব্রোঙ্কসে এক শ্রমিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
অত্যন্ত অসহায় অবস্থায় তাঁর দিন কাটে। বিয়ের আগেই মাত্র ২০ বছর বয়সে লিন্ডা
প্রথম সন্তানের জন্ম দেন। শোনা যায়, লিন্ডা লাভলেসের এই সন্তানকে অন্য কারও
কাছে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে লিন্ডা চক ট্রেনোর নামে একজনের সঙ্গে প্রেমের
সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে ও বিয়ে করেন। প্রথম দিকে লিন্ডার খুব
খেয়াল রাখলেও আস্তে আস্তে ট্রেনোর অত্যন্ত হিংস্র হয়ে ওঠে।
ট্রেনোর কুকুরের সঙ্গে যৌন সঙ্গমে
লিপ্ত হওয়া সহ বিভিন্ন ধরনে অত্যাচার করার
পাশাপাশি এবার চক স্ত্রী লিন্ডাকে পতিতাবৃত্তি করতে বলে। কিন্তু লিন্ডা এতে রাজি
হননি এবং স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ওই নারীর ভাগ্য তাঁর
সঙ্গে ছিল না। চক ট্রেনোর উস্কানিতেই প্রায় ৫ জন লোক লিন্ডাকে গণধর্ষণ করে। যতদিন
পর্যন্ত স্ত্রী স্বামীর সব কথা মেনে নিয়েছিলেন ততদিন পর্যন্ত এইসব চলছিল। দীর্ঘদিন
ধরে বিভিন্ন নৃশংস মানবেতর উপায়ে লিন্ডার সঙ্গে যৌন সঙ্গম করা হয়েছিল। এমনকি
কুকুরের সঙ্গে তাঁকে যৌনতায় লিপ্ত হতে বাধ্য করা হয়।
আরও পড়ুন: কেপলার ছিল মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপ, জেনে নিন সে সম্পর্কে
আরও পড়ুন: চন্দন দিয়ে এই টোটকা মানলে ঘোর বিপদ থেকেও মুক্তি পেতে পারেন
অবশেষে, যখন লিন্ডা লাভলেস তাঁর স্বামী চকের আনুগত্য মেনে নেন তখন
তাকে 'ডিপ থ্রোট' ছবির জন্য নিয়োগ
দেওয়া হয় এবং এর শুটিং করা হয়। এই ছবিতে লিন্ডাকে যেভাবে অভিনয় করানো হয়েছে
তা দেখলে শিউড়ে উঠতে হয়। ফিল্মের যে দৃশ্যগুলো মানুষ দেখে আনন্দ পেয়েছে সেই
দৃশ্যগুলো শুট করা হয়েছিল লিন্ডার মাথায় রাইফেল রেখে। দর্শকরা পর্দার নেপথ্যের
এই বাস্তবতা জানত না।
একটি তথ্য অনুযায়ী, শুটিংয়ের সময় লিন্ডা যখন বাথরুমে যেতেন তখন তাঁর উপর কড়া
নজর রাখা হত, পাশাপাশি ফোনে কথা বলার সময় লিন্ডার
দিকে বন্দুক তাক করা থাকত। উইকিপিডিয়ার মতে, লিন্ডা লাভলেস বিবাহবিচ্ছেদের সময়ও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে তাঁকে গানপয়েন্টে
রেখে পর্নোগ্রাফি করতে বাধ্য করেছিল তাঁর স্বামী।
১৯৭৬ সালে লিন্ডা লাভলেস কেবল
ইনস্টলার ল্যারি মার্চিয়ানোকে বিয়ে করেছিলেন, যার সাথে তাঁদের দুটি সন্তান ছিল। এই সময়, লিন্ডা লাভলেস লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করছিলেন। শরীরের এই পরিস্থিতিতে তিনি একটি
সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে গুরুতর আহত হন। এরপর ১৯৮০ সালে পর্নোগ্রাফি বিরোধী
আন্দোলনে অংশ নেন লিন্ডা। ১৯৮৬ সালে নিজের জীবনের উপর ভিত্তি করে একটি বই
লিখেছিলেন।
২০০২ সালের ৩ এপ্রিল আর একটি সড়ক
দুর্ঘটনার শিকার হন লিন্ডা। এই দুর্ঘটনাটি আগের চেয়েও ভয়াবহ ছিল। এমনকি লিন্ডা
লাভলেসকে লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে রাখা হয়েছিল। এইবারের আঘাত আর তিনি সামলাতে
পারেননি। ২২ এপ্রিল ৫৩ বছর বয়সে কলোরাডোতে লিন্ডা লাভলেস মারা যান। লিন্ডা
লাভলেসকে কলোরাডোর পার্কার সমাধিক্ষেত্রে সমাহিত করা হয়েছিল।