ভারতের ইতিহাসে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর নাম হীরকাক্ষরে লিখিত রয়েছে। সুভাষ
চন্দ্র বসু ছিলেন একজন সাহসী, সুদক্ষ নেতৃত্ব প্রদানকারী, এবং একজন ব্যতিক্রমী বক্তা।
তিনি নিজেও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, অন্যদেরও উৎসাহিত করেছিলেন
আজাদ হিন্দ ফৌজে যোগ দিতে। অথচ এমন মানুষটির মৃত্যু নিয়ে আজও ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে।
তাঁর মৃত্যুর সত্যতা জানতে তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই কমিটির
মত যে নেতাজি বিমান দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। তৃতীয় প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ধরনের কোনও
বিমান দুর্ঘটনা ঘটেইনি। তাহলে কীভাবে তিনি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যেতে পারেন! ‘মৃত্যু’র
পর কয়েক বছর ধরেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নেতাজিকে দেখার দাবি ওঠে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান পরাজিত হয়। এদিকে ব্রিটিশরা নেতাজিকে ধরতে বদ্ধপরিকর
ছিল। এমন পরিস্থিতিতে তিনি রাশিয়ার কাছে সাহায্য চাওয়ার জন্য মনস্থির করেন। ১৯৪৫
সালের ১৮ আগস্ট তিনি মাঞ্চুরিয়ার দিকে উড়ে যান। এরপর তাঁকে আর কেউ দেখতে পায়নি।
পাঁচ দিন পরে, টোকিও রেডিও ঘোষণা করে যে নেতাজির বিমানটি তাইহোকু বিমানবন্দরের
কাছে ভেঙ্গে পড়ে। দুর্ঘটনায় নেতাজি মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন এবং তাইহোকু সামরিক হাসপাতালে
তিনি মারা যান। তাঁর সাথে থাকা বাকি লোকজনও নিহত হয়। আজও টোকিওর রনকোজি মন্দিরে তার
‘অস্থি’ রক্ষিত রয়েছে।
স্বাধীন ভারতের সরকার তিনবার এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেয়। এর আগে দু’বারই
বিমান দুর্ঘটনাকে মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে, মনোজ কুমার মুখোপাধ্যায়ের
নেতৃত্বে তৃতীয় কমিশন গঠিত হয়েছিল। এই কমিশনের রিপোর্টে তাইওয়ান সরকারের উদ্ধৃতি
দিয়ে বলা হয়, ১৯৪৫ সালে কোনও বিমান দুর্ঘটনা ঘটেনি। এই বিমান দুর্ঘটনার কোনও রেকর্ড
নেই। যদিও সরকার এই প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করে।
নেতাজির মৃত্যুর খবর ছড়ানোর পরেও দেশের বহু এলাকায় তাঁকে দেখার দাবি উঠেছে।
ফৈজাবাদের গুমনামি বাবা থেকে ছত্তিশগড়ে সুভাষচন্দ্রকে দেখার খবর পাওয়া গিয়েছে। ছত্তিশগড়ের
বিষয়টি রাজ্য সরকারের কাছে গেলেও সরকার এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকার করে।
গুমনামি বাবার মৃত্যুর পর নেতাজির পরিবারের ছবি, পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত
নেতাজি সম্পর্কিত নিবন্ধ, নেতাজির কথিত মৃত্যু মামলার তদন্তের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ
ব্যক্তির চিঠি, শাহনওয়াজ কমিশন এবং খোসলা কমিশনের মতো বিষয় সংক্রান্ত রিপোর্ট বাবার
কাছ থেকেই পাওয়া গিয়েছিল।