১৯৩৪ সাল, সুভাষ চন্দ্র বসু তখন অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায়।
ততদিনে তিনি কংগ্রেসের যোদ্ধা হিসেবে পরিচিতি পেয়ে গিয়েছেন। আইন অমান্য আন্দোলনের
সময় কারারুদ্ধ সুভাষ চন্দ্র বসুর স্বাস্থ্য ১৯৩২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে খারাপ
হতে শুরু করে। এরপর ব্রিটিশ সরকার তাকে ইউরোপে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে রাজি হয়, যদিও তার পরিবারকেই চিকিৎসার খরচ বহন করতে হয়েছিল।
ভিয়েনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি ইউরোপে বসবাসরত ভারতীয়
ছাত্রদের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য ঐক্যবদ্ধ করবেন। এদিকে, একজন ইউরোপীয় প্রকাশক তাকে 'দ্য ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল' বইটি লেখার
দায়িত্ব দেন, এরপর তিনি একজন সহকর্মীর প্রয়োজন
অনুভব করেন যিনি ইংরেজির পাশাপাশি টাইপ করতেও জানেন।
সুভাষের বন্ধু ডক্টর মাথুর তাঁকে দুই
জনের নাম বলেন। প্রথম জন এলেন, কিন্তু পরীক্ষায়
পাশ করতে পারলেন না। এরপর ডাকা হল দ্বিতীয় প্রার্থীকে। তিনি ২৩ বছর বয়সী এমিলি
শেঙ্কল। সুন্দরী এই অস্ট্রিয়ান মেয়েকে চাকরি দিয়েছিলেন বোস। এমিলি ১৯৩৪ সালের
জুন থেকে সুভাষ চন্দ্র বসুর সঙ্গে কাজ শুরু করেন। তখন সুভাষের বয়স ৩৭। তাঁর কোনও
ধারণা ছিল না যে এমিলি তাঁর জীবনে একরাশ বসন্তের বাতাস নিয়ে এসেছে।
সুভাষ চন্দ্র বসুর দাদা শরৎ চন্দ্র
বসুর নাতি সুগত বোস লিখেছেন যে এমিলির সঙ্গে দেখা হওয়ার পর সুভাষের জীবন
নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। সুগত বোসের মতে, এর আগে সুভাষ চন্দ্র বসু প্রেম ও বিয়ের অনেক প্রস্তাব পেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি কোনওটিতেই আগ্রহ দেখাননি। কিন্তু এমিলির
সৌন্দর্য সুভাষকে মুগ্ধ করেছিল। ১৯৩৪ সালের মাঝামাঝি থেকে ১৯৩৬ সালের মার্চ
পর্যন্ত অস্ট্রিয়া ও চেকোস্লোভাকিয়ায় থাকার সময় নেতাজী ও এমিলির মধ্যে
সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
১৯১০ সালের ২৬শে জানুয়ারি
অস্ট্রিয়ার একটি ক্যাথলিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করা এমিলির বাবা পছন্দ করেননি যে
তাঁর মেয়ের একজন ভারতীয়র সঙ্গে কাজ করছেন। কিন্তু যখন তাঁরা সুভাষ চন্দ্র বসুর
সঙ্গে দেখা করেন, তখন তারা তার
ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে থাকতে পারেননি। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ রুদ্রাংশু
মুখোপাধ্যায় সুভাষ চন্দ্র বসু এবং জওহরলাল নেহরুর জীবন তুলনামূলকভাবে উপস্থাপন
করে একটি বই লিখেছেন নেহেরু অ্যান্ড বোস, প্যারালাল লাইভস। পেঙ্গুইন ইন্ডিয়া থেকে প্রকাশিত বইটির একটি অধ্যায় রয়েছে, 'টু উইমেন অ্যান্ড টু বুকস'। এই অধ্যায়টি বোস এবং নেহরুর জীবনে তাদের স্ত্রীদের ভূমিকাকে তুলে ধরে।
মুখার্জি তাতে লিখেছেন, 'সুভাষ এবং এমিলি
প্রথম থেকেই মেনে নিয়েছিলেন যে তাদের সম্পর্ক আলাদা এবং কঠিন হতে চলেছে। একে
অপরকে লেখা চিঠিতে তারা দুজন দুজনকে যে সম্বোধন করে করতেন তা থেকে এটি স্পষ্ট।
এমিলি সুভাষকে মিস্টার বোস লিখতেন, বোস আবার এমিলিকে মিস শেঙ্কল বা পার্ল শেঙ্কল বলে ডাকতেন।
এমিলি সম্পর্কে সুভাষ চন্দ্র বসুর
কেমন অনুভূতি ছিল, তা ওই চিঠি থেকেই
বোঝা যায়, যাকে সুভাষ চন্দ্র বসুর লেখা
প্রেমপত্র বলতে পারেন। শরৎচন্দ্র বসুর পুত্র শিশির কুমার বসুর স্ত্রী কৃষ্ণা বসুর
কাছে এমিলি নিজেই এই চিঠিটি হস্তান্তর করেছিলেন। ১৯৩৬ সালের ৫ মার্চ লেখা এই
চিঠিটি এভাবে শুরু হয়। 'আমার প্রিয়তম, যখন সময় আসে, একটি তুষার পর্বতও গলে যায়,' আমার এখন এমন
অনুভূতিই রয়েছে। আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি তা বলার জন্য কিছু লেখা থেকে নিজেকে
আটকাতে পারি না। যেমন আমরা একে অপরকে বলি, প্রিয়তম, তুমি আমার হৃদয়ের রানি, কিন্তু তুমি কি আমাকে ভালোবাসো।' এতে বোস আরও লিখেছেন, 'আমি জানি না ভবিষ্যতে কী হবে। আমাকে হয়তো বাকী জীবন জেলে কাটাতে হবে, আমাকে গুলি করা হতে পারে বা আমার ফাঁসি হতে পারে। হয়তো
তোমাকে আর কখনও দেখতে পাবো না বা চিঠিও
লিখতে পারব না - তবে আমাকে বিশ্বাস কর, তুমি সর্বদা আমার হৃদয়, আমার চিন্তা এবং
আমার স্বপ্নে থাকবে। এই জীবনে দেখা না হলে পরের জীবনেও থাকবে।'
এই চিঠির শেষে সুভাষ লিখেছেন, আমি তোমার ভেতরের নারীকে ভালোবাসি, তোমার আত্মাকে ভালোবাসি, তুমিই প্রথম নারী যাকে আমি ভালোবাসি। চিঠির শেষে সুভাষ এই চিঠিটি নষ্ট করার
অনুরোধও করেছিলেন, কিন্তু এমিলি
চিঠিটি রেখে দিয়েছিলেন।
সে সময় সুভাষ কেমন মেজাজে ছিলেন, তা স্পষ্ট হয় ১৯৩৭ সালের এপ্রিল বা মে মাসে এমিলিকে পাঠানো
একটি চিঠি থেকে। তিনি লিখেছেন, 'গত কয়েকদিন ধরে
ভাবছি তোমাকে চিঠি লিখব, কিন্তু তোমার
সম্পর্কে আমার অনুভূতি লেখা কতটা কঠিন ছিল তা তুমি বুঝতে পারছ। আমি শুধু তোমাকে
বলতে চাই যে আমি আগে যেমন ছিলাম এখনও তেমনই আছি। এমন কোনও দিন যায় না যেদিন তোমার
কথা ভাবি না। তুমি সবসময় আমার। অন্য কারও কথা ভাবতে পারি না। এই ক’মাসে আমি কতটা দুঃখ, একাকীত্ব অনুভব করেছি তা বলে বোঝাতে পারব না। শুধুমাত্র একটি জিনিস আমাকে খুশি
করতে পারে, কিন্তু আমি জানি না তা সম্ভব হবে
কিনা। এর পরেও আমি দিনরাত চিন্তা করছি এবং আমাকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য প্রার্থনা
করছি।“
পরে সুভাষ এবং এমিলি বিয়ে করেছিলেন।
এই বিয়ে কোথায় হয়েছিল সে সম্পর্কে, নেতাজীপত্নী কৃষ্ণা বোসকে বলেছিলেন যে ১৯৩৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর তাঁর ২৭ তম
জন্মদিনে অস্ট্রিয়ার বাদগাস্টিনে সুভাষ-এমিলি পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তবে
দু’জনেই বিয়ের কথা গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নেন। কৃষ্ণা বোসের
মতে,
এমিলি বিয়ের তারিখ জানানো ছাড়া অন্য কোনও তথ্য দেননি।
নেতাজী কন্যা অনিতা বোস অবশ্য তাঁকে
বলেছিলেন যে সিঁদুর পরিয়েই নেতাজী বিয়ে করেছিলেন এমিলি শেঙ্কলকে।
বাস্তবতা হল সুভাষ চন্দ্র বসু এবং
এমিলি একে অপরকে খুব ভালবাসতেন। ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত এমিলির সাহচর্য পান
সুভাষ,
তার মধ্যেও তিন বছরেরও কম সময় একসাথে থাকতে পেরেছিলেন
তাঁরা। তাদের ভালবাসার প্রতীক হিসাবে, ১৯৪২ সালের ২৯ নভেম্বর এক কন্যার জন্ম হয়েছিল, যার নাম ছিল অনিতা। এই নাম রাখা হয় ইতালীয় বিপ্লবী নেতা গ্যারিবাল্ডির
ব্রাজিলিয়ান বংশোদ্ভূত স্ত্রী অনিতা গ্যারিবাল্ডির সম্মানে।
সুভাষ তার মেয়েকে দেখতে ১৯৪২ সালের
ডিসেম্বরে ভিয়েনায় পৌঁছান এবং তারপরে দাদা শরৎচন্দ্র বসুকে বাংলায় লেখা একটি
চিঠিতে তার স্ত্রী ও কন্যার কথা জানান। এর পরে, সুভাষ সেই মিশনে চলে যায় যেখান থেকে তিনি আর কখনও এমিলি এবং অনিতার কাছে ফিরে
আসে না। কিন্তু এমিলি ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সুভাষ চন্দ্র বসুর স্মৃতির সাথে বেঁচে
ছিলেন।
hAddHhg
Aug 27, 2023 08:27 [IST]YWnWUqza
Jul 24, 2023 23:39 [IST]FerEoozF
Jul 19, 2023 18:58 [IST]Bloohopsy
Jun 18, 2023 08:45 [IST]Alcorse
Jun 18, 2023 04:31 [IST]endulky
Jun 11, 2023 23:27 [IST]Preelia
May 12, 2023 04:13 [IST]Pienuilia
May 11, 2023 20:27 [IST]igniguaps
May 05, 2023 09:36 [IST]glIlmer
Mar 19, 2023 18:29 [IST]Soigiougs
Mar 19, 2023 06:18 [IST]