ভারতের স্বাধীনতার জন্য বহু বীর জীবন
উৎসর্গ করেছেন। শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ছাড়াও ভারতের বাইরে একটি বাহিনী গড়ে উঠেছিল, নাম ছিল আজাদ হিন্দ ফৌজ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়
জাপানের সহায়তায় সিঙ্গাপুরে এই সেনাবাহিনীর ভিত্তি স্থাপিত হয়। নারী-পুরুষ
উভয়েই এই বাহিনীর সদস্য ছিলেন। ১৯৪২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত
প্রথম ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী ছিল আইএনএ বা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি।
জাপানের উদ্দেশ্য এবং আইএনএ
নেতৃত্বের মধ্যে মতানৈক্যের কারণে, জাপান অবশিষ্ট সৈন্যদের দায়িত্ব রাসবিহারী বসুকে দেয়। ভারতীয়দের মধ্যে
স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ের চেতনা জাগানোর জন্য আইএনএ আজাদ হিন্দ রেডিও ব্যবহার
করেছিল। এই স্টেশনটি ইংরেজি, মারাঠি, বাংলা, পাঞ্জাবি, পশতু এবং উর্দুতে সংবাদ সম্প্রচার করত।
যুদ্ধবন্দী, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয় ইত্যাদি সহ
সেনাবাহিনীতে প্রায় ৬০ হাজার সৈন্য ছিল। নেতাজি সেনাবাহিনীতে ১০ লক্ষ সৈন্য
চেয়েছিলেন কিন্তু জাপান তাঁর কথা শোনেনি।
আইএনএ কর্তৃক ব্রিটিশদের উপর প্রথম
আক্রমণের পরই জাপানি বাহিনী আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জকে আজাদ হিন্দ ফৌজের কাছে
হস্তান্তরিত করে। এই দ্বীপে প্রথমবার জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন নেতাজি। এই
দ্বীপগুলোর নাম ছিল 'শহীদ' ও 'স্বরাজ'।
আজাদ হিন্দ ফৌজ সম্ভবত প্রথম
সৈন্যবাহিনী যার একটি নারী ইউনিট ছিল। নেতাজি নারীদের বলেছিলেন, ভবিষ্যতে স্বাধীনতা চাইলে তাঁদেরও রক্ত ঝরাতে হবে। রানি
লক্ষ্মী বাইয়ের নামানুসারে এই শাখার নামকরণ করা হয় ঝাঁসির রানি ব্রিগেড।
নেতাজি কংগ্রেসের প্রবীন নেতাদের
নামেও বেশ কয়েকটি ব্রিগেড গঠন করেছিলেন। যেমন- গান্ধি ব্রিগেড, নেহেরু ব্রিগেড, আজাদ ব্রিগেড। নেতাজির বিরোধিতা সত্ত্বেও সেনাবাহিনীর সৈন্যরা তাঁর নামে সুভাষ
ব্রিগেড গঠন করে।
আরও পড়ুন: বৃহস্পতির কৃপায় টাকা আসবে এই রাশির জাতকদের হাতে
আরও পড়ুন: এই নিয়ম মেনে বাড়িতে টাকা রাখলে ধনী হবেনই
আইএনএ-তে ধর্মের ভিত্তিতে কোনও
বৈষম্য ছিল না। এতে প্রতিটি ধর্মের সৈন্য ছিল। দেশের স্বাধীনতার জন্য সব ধর্মের
মানুষ একসঙ্গে লড়াই করে। শুধু তাই নয়, একই খাবার পেতেন সৈন্য ও অফিসাররাও।
১৯৫৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিবিসিকে
দেওয়া একটি সাক্ষাত্কারে, বাবাসাহেব আম্বেদকর
স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা আজাদ হিন্দ ফৌজের কারণে ভারত
স্বাধীনতা পেয়েছিল।
জওহরলাল নেহেরু শুরুতে আজাদ হিন্দ
ফৌজের বিরোধিতা করেন। স্বাধীনতার পর নেহরু একজন সৈনিককেও ভারতীয় সেনাবাহিনীর অংশ
হতে দেননি।
১৯৪২-৪৫ সালের মধ্যে, ‘কদম কদম বাড়ায়ে জা’ দেশাত্মবোধক গানটি আজাদ হিন্দ ফৌজ কুইক রেজিমেন্ট মার্চের জন্য ব্যবহার
করেছিল। এই গানটি সুর দিয়ে সাজিয়েছিলেন রাম সিং ঠাকুর।
আজাদ হিন্দ ফৌজের ঘটনা এতটাই
হিংসাত্মক বলে বিবেচনা করেছিল যে ব্রিটিশ সরকার বিবিসির তৈরি আইএনএ-এর উপর নির্মিত
তথ্যচিত্রও নিষিদ্ধ করেছিল।
নেতাজির অন্তর্ধানের পর, আইএনএ অফিসারদের আত্মসমর্পণ করতে হয়েছিল। তাদের ‘সাদা’, ‘ধূসর’ এবং ‘কালো’ বিভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল। 'সাদা'
ক্যাটাগরির সেই সৈন্যরা ছিল যাদেরকে ব্রিটিশরা ব্রিটিশ
রাজের অনুগত হতে পারে বলে মনে করেছিল, 'ধূসর'
শ্রেনীর সৈন্যদের উপর নজর রাখা প্রয়োজন এবং 'কালো' শ্রেনীর সৈন্যরা
প্রকৃত দেশপ্রেমিক বলে মনে করা হয়েছিল।
glIlmer
Mar 21, 2023 16:40 [IST]Pealock
Feb 06, 2023 14:12 [IST]