আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি
স্টেডিয়ামে ২০২৩ সালের আইপিএল এর সূচনা হয়ে গেল দিন কয়েক আগেই। স্টেডিয়ামে সূচনার
দিন তিলধারণের জায়গা ছিল না। এই যে তিল ধারণের জায়গা না থাকা সেটা কি শুধুই খেলার
জন্য?
অনেকের কাছে আইপিএল হল বৈধভাবে খেলা জুয়া। তাই তাদের মতো
মানুষ হয়তো খেলা দেখতেই যাননি। তাহলে বলতে হয় গিয়েছিলেন কীসের জন্য? আসলে তারা বা আপামর ক্রীড়াপ্রেমী সেদিন স্টেডিয়াম
ভরিয়েছিলেন অন্য একটি টানে। সেই টানের নাম অরিজিৎ সিং। আইপিএল অনুষ্ঠানের
সূচনাপর্বে অরিজিৎ যতকশন স্টেজে এবং মাঠে ছিলেন ততক্ষণ গ্যালারিতে বসে থাকা সাধারণ
মানুষের পাশাপাশি জয় শাহ, অনুরাগ ঠাকুরের মতো
চূড়ান্ত রাজনীতিবিদদের ঠোঁটও নড়েছে বাংলার ছেলের কণ্ঠের তালে তালে। প্রায় ৩০ মিনিট
বা তাঁর কিছু বেশি সময় অরিজিৎ ঝড়কে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেছেন গোটা ভারত। অথচ যে
মানুষটিকে নিয়ে এত উন্মাদনা তাঁর মধ্যে কিন্তু কোনও বিকার নেই। একেবারে মাটির
মানুষ বললে যা বোঝায় অরিজিৎ সিং ঠিক তাই।
মঙ্গলবার সকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি
ভিডিও ভাইরাল হয়। তাতে হুডি দিয়ে মুখ ঢেকে একজনকে ট্রেনে সফর করতে দেখা হয়।
ভক্তদের ভগবানকে চিনতে ভুল হয়নি। ওই ব্যক্তি অরিজিৎ সিং নাকি নন, এই ভাবতে ভাবতেই জানা গেল তিনি আসলেই অরিজিৎ সিং। ৪ এপ্রিল
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে অরিজিৎ কনসার্ট করলেন।
এখন প্রশ্ন হল, যিনি কনসার্ট করতে কোটি কোটি অঙ্কের টাকা পারিশ্রমিক নেন, তিনি এলেন ট্রেনে! ব্যক্তিগত গাড়ি নয়, বিমান নয়, নিদেনপক্ষে
হেলিকপ্টারেও নয়, অরিজিৎ এলেন কীনা
ট্রেনে! যাতে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ ভ্রমণ করেন। জিয়াগঞ্জ থেকে শিলিগুড়ি
পৌঁছতে অরিজিতের বাহন ছিল ট্রেন! বুধবার রাত ২.৩০ নাগাদ তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে ঢোকে। প্ল্যাটফর্মে তখন অগুনতি ভক্ত অপেক্ষমাণ। অবশেষে
নামলেন তিনি, পরনে জলপাইরঙা হুডি, মাথা ঢাকা তা দিয়েই। মুখে মাস্ক। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে
প্ল্যাটফর্মে নামতেই মুছে দিলেন আড়ালটুকু। খুলে ফেললেন হুডি, মাস্ক।
সাধারণ জীবনযাপন বোধহয় একেই বলে।
যিনি এক প্রথিতযশা কবি ও পরিচালকের বাড়িতে গিয়ে বলতে পারেন, “এসি চালিও না, ইলেকট্রিক বিল বেশি আসবে’, যিনি আজও জিয়াগঞ্জে
আসলে স্কুটি নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর সাহস রাখেন, যিনি কোনও পাঁচতারা রেস্তোরাঁ বা ক্যাফে নয় চায়ের দোকানে বসে আড্ডা মারতেই
স্বচ্ছন্দ তাঁর কাছ থেকে এই ব্যবহারই তো আশা করা যায়। ফলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে
পড়েছে অরিজিৎ সিংয়ের ভূয়সী প্রশংসা। কেউ লিখেছেন, ‘‘সাধারণ জীবনযাপনের সেরা উদাহরণ।’’ আবার কারও মতে, ‘‘আজ থেকে একশো বছর
পরেও মানুষ অরিজিৎকে শুধুমাত্র তাঁর গানের জন্য নয়, তাঁকে একজন সহজ-সরল মানুষ হিসেবেও মনে রাখবেন।’’
তবে এই জীবনযাপন শুধু জিয়াগঞ্জে নয়, মুম্বইয়েও। যে এলাকায় যে আবাসনে অরিজিতের ফ্ল্যাট এবং
মুম্বইয়ের অফিস, তা এত নামী সঙ্গীতশিল্পীর বাসস্থান
হিসাবে অনেকেই কল্পনা করতে পারেন না। আবাসনের পিছনে রয়েছে একটি সব্জি বাজার।
সেখানে অনেক সময়ই অরিজিৎকে দেখা যেত তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে বাজার করতে। সেখানেও তাঁর
বাহন স্কুটি। এমনও শোনা যায় যে, স্কুটি তাঁর বড়ই
প্রিয়। গাড়ি তিনি কিনতেই চাননি। কিন্তু পরে একটি ছোট গা়ড়ি কিনেছিলেন সপরিবারে
যাতায়াত করার জন্য। আরও পরে ম্যানেজারের চাপে পড়েই খানিক বড় গাড়ি কিনতে বাধ্য
হয়েছিলেন। নিজের শিকড়কে যে কখনও ভুলতে নেই, তাঁর প্রকৃষ্ট উদাহরণ বাংলার ছেলে অরিজিৎ সিং।