এখন মেঝেতে বসে খাওয়ায় অভ্যাস নেই বললেই চলে। আধুনিক সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে মানুষ ভাল অভ্যাসগুলোকেও দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।
অন্যদিকে, মেঝেতে বাবু মেরে বসে যদি আপনি খাবার খান; তাহলে নানাভাবে উপকৃত হবেন। গ্রামে অবশ্য এখনো অনেক মানুষই মেঝেতে বসে খাবার খাওয়ার অভ্যাস ছাড়তে পারেননি, যা তাদের জন্য ভাল দিক।
অথচ সামান্য এ অভ্যাসটি যে শরীরের জন্য কতটা উপকারী অজানা অনেকের। বিভিন্ন কঠিন রোগ থেকে মুক্তি মেলে এ ছোট্ট অভ্যাসে। হার্ট ভাল থাকে, জয়েন্টের ব্যথা থেকে মুক্তি মেলে এমনকি ওজনও কমে।
চিকিৎসকদের মতে, এ অভ্যাসটি আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর অনেক ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। মেঝেতে বাবু হয়ে বসে খাওয়ার সময় আমাদের শরীরের ভিতরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে তার প্রভাবে বেশকিছু উপকার মেলে। জানুন সেসব উপকারিতা সম্পর্কে-
১) মানসিক চাপ দূর হয় এবং কাজের প্রতি একাগ্রতা বাড়ে মেঝেতে বসে খেলে। ডেইনিং টেবিল-চেয়ারে বসে খেলে এ উপকারিতাটুকু পাবে না আপনার শরীর। বসে খাওয়ার সময় যখন এক পা অন্য পায়ের উপর রেখে পদ্মাসনের ভঙ্গিতে থাকা হয়। তখন অ্যাবডোমেনের মাসেলে টান পড়ে। যার ফলে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি মেলে।
২) মেঝেতে বাবু হয়ে বসে খেলে খাবার দ্রুত হজম হয়। অনেকেরই হজমজনিত সমস্যা রয়েছে। তাদের জন্য বসে খাওয়ার উপকারিতা অনেক। মেঝেতে বসে খাবার খাওয়ার সময় সামনে মাথাটা সামন্য ঝুঁকে আবার সোজা হয়ে বসেন, এটাই স্বাভাবিক অভ্যাস। বারবার এ ঘটনা ঘটে বলেই হজম হয় দ্রুত।
৩) মেঝেতে খাওয়ার আরও এক উপকারিতা হলো, দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঠিক থাকা। এতে করে দেহ অনেক সমস্যা কাটিয়ে ওঠে। পেশী শক্তিশালী করার পাশাপাশি সঠিক ভঙ্গিতে বসার কারণে শরীরে রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি ঘটে। এতে হৃত্পিণ্ডকেও কম পরিশ্রম করতে হয়।
৪) মেঝেতে বসে খাবার খেলে মেরুদণ্ডের নীচের অংশকে জোর দেওয়া হয়। এটি আপনার শ্বাসের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। পেশীগুলোর স্ট্রেন এবং রক্তচাপ হ্রাস করে।
৫) জয়েন্টের ব্যথায় কাবু অনেকেই। জানেন কি? মাটিতে বসে খাবার খেলে জয়েন্টের ব্যথা থেকেও মুক্তি মেলে। কারণ এজন্য আপনার হাঁটু বাঁকাতে হয়। এতে হাঁটুর অনুশীলনও হয়ে যায়। মেঝেতে বসে খাবার খাওয়া হিপ সন্ধি, হাঁটু এবং গোড়ালি নমনীয় করে তোলে। এ কারণে আপনি জয়েন্টে ব্যথার সমস্যা এড়াতে পারবেন সহজেই।
৬) শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখার বিকল্প নেই। মেঝেতে বসে খাবার খেলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে। এটি হার্টের চারপাশের চাপ হ্রাস করে। আপনি যদি হার্টের রোগী হন, তাহলে ডাইনিং টেবিল বা টেবিল-চেয়ারে বসে না খেয়ে মেঝেতে বসে খাবার খাওয়ার অভ্যাগ গড়ুন।
৭) বাবু হয়ে বসে খাওয়ার অভ্যাস করলে কোমর, পা থেকে মেরুদণ্ড, সবকিছু উপকৃত হয়।
৮) ওজন কমাতে সবাই কতকিছুই না করেন! বাবু হয়ে বসে খাবার খেলে দ্রুত ওজনও কমে। এতে অ্যাবডোমেনের মাসেলের মুভমেন্ট হয়, যা পেটের মেদ অনেকটা কমতে পারে। এ ছাড়াও বসে খাবার খাওয়ার সময় আপনি বেশি খেতেও পারবেন না। সব মিলিয়ে ওজন কমাতেও কার্যকরী মেঝেতে বসে খাওয়ার পদ্ধতি।