ভারতের চলচ্চিত্র জগতের ইতিহাসে যে হাতে গোনা কয়েকজন ব্যক্তিত্ব
বাংলা সিনেমাকে বিশ্বের দরবারে সগর্বে উপস্থাপিত করেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম
অগ্রগণ্য মৃণাল সেন। আজ তাঁর ৯৯ তম জন্মবার্ষিকী। সত্যজিৎ রায় ও ঋত্বিক ঘটকের
সঙ্গে উচ্চারিত হয় মৃণাল সেনের নাম। তিনজনেই ছিলেন একে অপরের কাজের অসম্ভব
অনুরাগী। ফলে এই ত্রয়ীর প্রতিযোগিতা ছিল সুস্থ, সুন্দর। আজ মৃণাল সেনের
৯৯ তম জন্মদিনে তাঁর সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
মৃণাল সেনের জন্ম ১৯২৩ সালে অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুরে।
তিনি কলকাতায় স্কটিশচার্চ কলেজ থেকে পড়াশোনা করেছেন। এই স্কুল থেকেই একসময়
শিক্ষালাভ করেছিলেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু।
মৃণাল সেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই)-এর সাংস্কৃতিক
শাখায় যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু কখনওই সদস্য হননি। সেন বুঝতেন রাজনীতি সংস্কৃতির
উদ্দেশ্যকে সব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশনের একজন সদস্য
ছিলেন। এটি বাংলার যুবকদের একত্রিত করতে এবং ভারতের স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে
থিয়েটারে তাঁদের সম্পৃক্ত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল।
আরও পড়ুন: Calcutta High Court: পাত্র-পাত্রীর অমতে রেজিস্ট্রি করে বিয়েও বেআইনী, জানাল কলকাতা হাইকোর্ট
আরও পড়ুন: Kolkata Metro: সোমবার কম থাকবে মেট্রো রেল পরিষেবা, জেনে নিন শেষ ট্রেন কখন
কলকাতার টালিগঞ্জের ‘স্টুডিও পাড়া’ থেকে সিনেমার সঙ্গে
মৃণাল সেনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে বিখ্যাত জার্মান ফিল্ম
তাত্ত্বিক রুডলগ আর্নহেইম লিখিত বই ‘ফিল্ম অ্যাজ আর্ট’
পড়ার সময় তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ জগতের সঙ্গে প্রথম পরিচিত হন।
পরিচালকের কেরিয়ার পুরোপুরিভাবে শুরু করার জন্য মৃণাল সেন
কলকাতার একটি ফিল্ম স্টুডিওতে একজন অডিও টেকনিশিয়ানের চাকরি নেন।
সেনের প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ‘রাত ভোর’। এটি ১৯৫৫ সালে মুক্তি পায়। ‘রাত ভোর’ ছিল বাংলার ম্যাটিনি আইডল উত্তম কুমারের প্রথম ছবি। তবে বক্সঅফিসে
একেবারেই ব্যবসা করতে পারেনি সিনেমাটি। সেনের পরবর্তী চলচ্চিত্র ছিল ১৯৫৯ সালে ‘নীল আকাশের নীচে’। এই সিনেমাটি তাঁকে রাতারাতি
পরিচিতি এনে দেয়।
১৯৬০ সালে মৃণাল সেন তৈরি করেন ‘বাইশে
শ্রাবণ’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষকৃত্যের সময় পদদলিত হয়ে
একটি শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুর উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছিল। বাইশে শ্রাবণে
প্রয়াত হয়েছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই ছবিটি আন্তর্জাতিক প্রশংসা অর্জন
করে।
১৯৬১ সালের ‘পুনশ্চ’ মৃণাল সেনকে প্রথম পুরস্কার এনে দিয়েছিল। দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার বিজয়ী
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এই সিনেমায় অভিনয় করে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। সেনের
আরেকটি মাস্টারপিস বলা যেতে পারে কলকাতা ৭১’কে। ১৯৭২ সালের
এই সিনেমাটি স্বাধীনতাপূর্ব সময় থেকে তৎকালীন সময় পর্যন্ত বাংলা যে সামাজিক ও
রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল তা ফুটে উঠেছিল। ১৯৮০ সালের ছবি ‘আকালের সন্ধানে’র জন্য সর্বাধিক জাতীয় পুরস্কার পান
মৃণাল সেন। এটি সেরা ফিচার ফিল্ম, সেরা পরিচালনা, সেরা চিত্রনাট্য এবং সেরা সম্পাদনার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
পেয়েছে। এটি ৩১ তম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সিলভার বিয়ার পুরস্কার
জেতে।
সেন ছিলেন ভারতে পরীক্ষামূলক চলচ্চিত্র নির্মাণের
পথপ্রদর্শক। তাঁর অন্যরকম ক্যামেরা মুভমেন্ট, তার এপিসোডিক বর্ণনার
ব্যবহার, নিউজ-রিলের টাইপ মন্তেজ, এমনকি
স্লোগানের মধ্যে এমন কিছু ছিল যা ভারতীয় দর্শকরা আগে কখনও দেখেনি। তাঁর
পরীক্ষামূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং তারুণ্যের কারণে মৃণাল সেনকে ‘ম্যাভারিক
মায়েস্ত্রো’ বলে অভিহিত করা হয়।
মৃণাল সেন পর্দায় অনেক নবাগত মুখের সঙ্গে দর্শককে পরিচয়
করিছিলেন। তার ১৯৭৬ সালের চলচ্চিত্র ‘মৃগয়া’ ছিল কিংবদন্তি অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর অভিষেক।