বর্তমানে আমরা রবিবার ছুটির দিন হিসেবে পালন করি। এর নেপথ্যে রয়েছে একটি
মানুষের অবদান। রবিবারকে ছুটির দিন হিসাবে পাওয়ার পিছনে এক দীর্ঘ লড়াই ছিল।
ব্রিটিশ শাসনামলে মিল শ্রমিকদের সাতদিন কাজ করতে হত। সপ্তাহের একটি দিনও
তাঁরা ছুটি পেতেন না। সে সময় ব্রিটিশ অফিসাররা প্রতি রবিবার প্রার্থনার জন্য গির্জায়
যেতেন কিন্তু শ্রমিকদের জন্য তেমন কোনও প্রথা ছিল না। শ্রী নারায়ণ মেঘাজি লোখান্ডে
নামে এক মিল শ্রমিক নেতা ব্রিটিশদের সামনে সাপ্তাহিক ছুটির প্রস্তাব দিয়ে বলেছিলেন
যে আমরা নিজেদের জন্য এবং আমাদের পরিবারের জন্য ৬ দিন কাজ করি, তাই আমাদের একদিন আমাদের
দেশের জন্য কাজ করতে হবে। এর সঙ্গে তিনি শ্রমিকদের বলেন যে রবিবার হিন্দু দেবতা ‘খান্ডোবা’র দিন, তাই এই দিনটিকে
সাপ্তাহিক ছুটি হিসাবে ঘোষণা করা উচিত।
প্রত্যাসা মতোই লোখান্ডের প্রস্তাব ব্রিটিশ কর্মকর্তারা প্রত্যাখ্যান করেন।
তা সত্ত্বেও, লোখান্ডে নিজের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। অবশেষে ৭ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামের
পর ১৮৯০ সালের ১০ জুন ব্রিটিশ সরকার রবিবারকে ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা করে।
শ্রী লোখান্ডে ভারতের শ্রম আন্দোলনের একজন বিশিষ্ট নেতা ছিলেন। উনিশ শতকে
শুধুমাত্র টেক্সটাইল মিলগুলির কার্যকারিতা পরিবর্তনের জন্যই নয়, বর্ণ ও সাম্প্রদায়িক
বিষয়ে তাঁর উদ্যোগের জন্যও এই মানুষটিকে স্মরণ করা হয়। তিনি ভারতে ট্রেড ইউনিয়ন
আন্দোলনের জনক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। মহাত্মা জ্যোতিবা ফুলের সহযোগী লোখান্ডের সহায়তায়
ভারতের প্রথম শ্রমিক সংগঠন ‘বোম্বে মিল অ্যাসোসিয়েশন’ গড়ে উঠেছিল। ভারত
সরকার ২০০৫ সালে শ্রী নারায়ণ মেঘাজি লোখান্ডের ছবি সহ একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে।
লোখন্ডের প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ মিল শ্রমিকদের রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি, বিকেলে
আধা ঘন্টা মধ্যাহ্নভোজের বিরতি এবং প্রতি মাসের ১৫ তারিখে মাসিক বেতন দেওয়া শুরু হয়।
এ ছাড়া তাঁর জন্যই মিলগুলিতে কাজ শুরু করার জন্য সকাল ৬টা এবং শেষ করার জন্য সূর্যাস্তের
সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল।