'মিস ওয়ার্ল্ড' এবং 'মিস
ইউনিভার্স'-এর মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হল এই দুটি
সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা দুটি ভিন্ন দেশ দ্বারা পরিচালিত এবং সংগঠিত হয়। 'মিস ওয়ার্ল্ড' ইউকে অর্থাৎ ব্রিটেন দ্বারা পরিচালিত
হয়, 'মিস ইউনিভার্স' মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
দ্বারা পরিচালিত হয়। এই
দুটি প্রতিযোগিতাতেই নারীদের বিচার করা হয় শুধুমাত্র তাদের সৌন্দর্যের উপর নয়, তাদের শরীরী ভাষা, রসবোধ, জ্ঞান,
দৃষ্টি এবং অন্যান্য প্রতিভার বিচারেও।
মিস
ওয়ার্ল্ড' এবং 'মিস ইউনিভার্স'
এর মধ্যে পার্থক্য
'মিস ওয়ার্ল্ড' এবং 'মিস
ইউনিভার্স' উভয়ই আন্তর্জাতিক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা যা প্রতি
বছর অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৫১
সালে ব্রিটেন প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্তরে নারীদের সৌন্দর্যের জন্য 'মিস ওয়ার্ল্ড' নামে একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা শুরু
করে। এর
মাত্র এক বছর পর, ১৯৫২ সালে আমেরিকাও একটি সৌন্দর্য
প্রতিযোগিতা শুরু করে যার নাম দেওয়া হয় 'মিস ইউনিভার্স'। এই
দুই সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় শুধু সৌন্দর্যই মাপকাঠি নয়, মানুষের জীবনের ইতিবাচক দিকগুলিকেও বিশ্বের সামনে তুলে ধরাও এর উদ্দেশ্য।
‘মিস
ওয়ার্ল্ড' প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে প্রথমে আপনাকে 'মিস ইন্ডিয়া' খেতাব জিততে হবে। এর
পরেই আপনি 'মিস ওয়ার্ল্ড' প্রতিযোগিতায়
ভারতের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন।
‘মিস
ইউনিভার্স' প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য প্রার্থীর
বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। এর
পাশাপাশি প্রার্থীর জন্য জাতীয় পর্যায়ের সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়া
আবশ্যক। এই
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের দুটি উপায় রয়েছে।
'মিস ওয়ার্ল্ড'-এর ইতিহাস কী?
'মিস ওয়ার্ল্ড' প্রতিযোগিতাটি ১৯৫১ সালের ২৯ জুলাই ব্রিটিশ
টিভি হোস্ট এরিক মর্লে শুরু করেছিলেন। এর
প্রধান কার্যালয় লন্ডনে। বর্তমানে
এর প্রেসিডেন্ট জুলিয়া মোর্লে। ১৯৫১ সালে, 'মিস ওয়ার্ল্ড' খেতাব প্রথম জিতেছিলেন সুইডেনের
কার্স্টিন 'কিকি' হাকানসন। এর
পরে, ১৯৫২ সালে সুইডেনের মে-লুইস ফ্লোডিন বিজয়ী হন।
কীভাবে
শুরু হল 'মিস ওয়ার্ল্ড'
প্রতিযোগিতা?
১৯৫১
সালে ব্রিটিশ টিভি হোস্ট এরিক মর্লে 'ব্রিটেন উৎসব'
চলাকালীন একটি 'বিকিনি প্রতিযোগিতা'র আয়োজন করেন। আসলে
এটি একটি 'সুইমস্যুট প্রতিযোগিতা' ছিল, যা বিকিনি প্রচারের জন্য আয়োজিত হয়েছিল। এরিকের
ইভেন্টটি সফল হয়। মিডিয়া এর নাম দেয় 'মিস ওয়ার্ল্ড'। এখান
থেকেই 'মিস ওয়ার্ল্ড' আয়োজনের
ধারণা পান এরিক। ১৯৫৯ সালে বিবিসি প্রথমবারের মতো এই
প্রতিযোগিতার সম্প্রচার শুরু করে। এর
পরে, 'মিস ওয়ার্ল্ড' ১৯৬০ এবং ১৯৭০
এর দশকে ব্রিটিশ টেলিভিশনে বছরের সবচেয়ে বেশি দেখা অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে।
বিতর্কের
সঙ্গে গভীর সম্পর্ক
১৯৫১
সালের মিস ওয়ার্ল্ড বিজয়ী কিকি হাকানসন বিকিনি পরিহিত হওয়ার কারণে অনেক দেশ
প্রতিযোগিতাটি বয়কট করতে শুরু করে। ১৯৭০ সালে, লন্ডনে অনুষ্ঠিত 'মিস ওয়ার্ল্ড' প্রতিযোগিতায় নারী মুক্তি আন্দোলনকারীরা এই নিয়ে প্রবল আন্দোলন করে। ১৯৭০
সালের প্রতিযোগিতাটি বিতর্কিত ছিল, কারণ এই বছর দক্ষিণ
আফ্রিকা তার দুই প্রতিযোগীকে পাঠিয়েছিল। তাদের
মধ্যে একজন ছিলেন সাদা চামড়ার, অন্যজন কালো চামড়ার। এর পর বর্ণবৈষম্য শেষ না হওয়া
পর্যন্ত এই প্রতিযোগিতা থেকে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিষিদ্ধ করা হয়।
মিস
ওয়ার্ল্ডের ৭০ বছরের ইতিহাসে ভেনেজুয়েলা সবচেয়ে বেশিবার এই শিরোপা পেয়েছিল। এর
পরেই তালিকায় রয়েছে ভারত। ভারতের রিতা ফারিয়া (১৯৬৬), ঐশ্বর্য রাই (১৯৯৪), ডায়ানা হেডেন (১৯৯৭), যুক্তামুখী (১৯৯৯), প্রিয়াঙ্কা চোপড়া (২০০০) এবং
মানুশি চিল্লার (২০১৭) এই খেতাব জিতেছেন। এই
তালিকায় তিন নম্বরে রয়েছে সুইডেনের নাম।
'মিস ইউনিভার্স'-এর ইতিহাস কী?
'মিস ইউনিভার্স' প্রতিযোগিতাটি ১৯৫২ সালের ২৮ জুন
আমেরিকায় শুরু হয়েছিল। এর
সদর দফতর নিউইয়র্কে। এটি 'মিস ইউনিভার্স অর্গানাইজেশন' দ্বারা পরিচালিত হয়। ১৯৫২
সালে ফিনল্যান্ডের আরমি কুসেলা বিশ্বের প্রথম 'মিস ইউনিভার্স'
হয়েছিলেন। 'মিস ইউনিভার্স' প্রতিযোগিতার
লক্ষ্য হল মানবতাবাদী সমস্যা এবং বিশ্বের ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য কণ্ঠস্বর হয়ে
ওঠা। বর্তমানে
'মিস ইউনিভার্স'-এর প্রেসিডেন্ট
পলা শোগার্ট। মিস
ইউনিভার্স প্রতিযোগিতাটি ১৯০টিরও বেশি দেশের ৫০০ মিলিয়ন দর্শক দেখে আনন্দ পান।
এত বছরের 'মিস ইউনিভার্স'-এর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি খেতাব নিয়ে
এগিয়ে রয়েছে আমেরিকা। এর পর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভেনেজুয়েলা,
তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফিলিপাইন। ভারতের ৩ সুন্দরী সুস্মিতা সেন (১৯৯৪),
লারা দত্ত (২০০০) এবং হরনাজ সান্ধু (২০২১) সালে এই খেতাব জিতেছেন।