Amitabh Bachchan: কখনও বলা হয়েছে লোভী, কখনও বা উঠেছে যৌন হয়রানির অভিযোগ- অমিতাভের জীবন জন্ম দিয়েছে বহু বিতর্কের
Mar 20, 2023 19:55 [IST]
Last Update: Mar 20, 2023 20:15 [IST]
বিখ্যাত কবি হরিবংশ রাই বচ্চন এবং
সমাজসেবী তেজি বচ্চনের ঘরে জন্ম নেওয়া অমিতাভ বচ্চনের আজ কোনও পরিচয়ের প্রয়োজন
পড়ে না। দিল্লি থেকে স্নাতক ডিগ্রি শেষ করার পর, অমিতাভকে তাঁর বাবা হরিবংশ মুম্বাই নিয়ে যান। সেখানে তিনি অমিতাভকে চলচ্চিত্র
প্রযোজক পৃথ্বীরাজ কপূরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন, যাতে বিগ বি ইন্ডাস্ট্রিতে কিছু কাজ পেতে পারেন। কিন্তু সেই সময়ে অমিতাভ
উৎসাহ ছাড়া আর কিছুই পাননি।
আজকের সময়ে অমিতাভ বচ্চন একজন আদর্শ
মানুষ,
একজন আদর্শ বাবা, একজন দার্শনিক এবং একজন সম্পূর্ণ পারিবারিক মানুষ। কঠোর পরিশ্রম ও যোগ্যতার
জোরে অনেক তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করার কাজ করেছেন তিনি। শাহেনশাহ জীবনে বহু
সাফল্য অর্জন করেছেন, সেই সঙ্গে বহুবার
গুরুতর বিতর্কে জড়িয়েছেন। আজ বরং সেই সাফল্য নয়, বিতর্ক নিয়েই আলোচনা করা যাক।
অমিতাভ বচ্চনের বিরুদ্ধে যৌন
হেনস্থার অভিযোগ আনেন সায়ালি ভগত
২০১১ সালে প্রাক্তন ফেমিনা মিস
ইন্ডিয়া ওয়ার্ল্ড সায়ানি ভগত অমিতাভ বচ্চন, সাইনি আহুজা এবং সাজিদ খানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছিলেন। এর পরেই
বিগ বি প্রকাশ্যে সায়ানির বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন, যার পরে জানা যায় যে সায়ানি সাইবার ক্রাইমের শিকার
হয়েছেন।
কাদের খান অমিতাভ বচ্চনের ঔদ্ধত্যের
গল্প বর্ণনা করেছিলেন
অমিতাভ বচ্চন এবং প্রয়াত অভিনেতা
কাদের খান বেশ কয়েকটি হিট ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন। একসময় তাঁদের দুজনের মধ্যে
খুব সুন্দর বন্ধুত্ব ছিল। কিন্তু খ্যাতি এবং সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে
অমিতাভ হয়ে উঠেছিলেন অহংকারী এবং আত্মকেন্দ্রিক। একবার একটি নিউজ পোর্টালকে দেওয়া
একটি সাক্ষাৎকারে কাদের খান অমিতাভের সঙ্গে তাঁর সুন্দর এবং সত্যিকারের বন্ধুত্বের
অবসানের নেপথ্যে থাকা পুরো ঘটনাটি প্রকাশ করেছিলেন।
কাদের খান বলেছিলেন, “আমি ওকে অমিত বলে ডাকতাম। একদিন সাউথ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির
একজন প্রযোজক আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'আপ স্যারজি সে মিলে?' আমি তাঁকে বললাম, 'কে স্যার?' তিনি বললেন, 'জানেন না স্যার কে? সেই লম্বা লোকটা', তারপর আমি অমিতাভের
দিকে ইশারা করলাম। আমি বললাম, 'ওহ তো অমিত হ্যায়, স্যারজি কব সে হো গয়ে?' প্রযোজক বললেন, 'আমরা এখন থেকে ওকে
স্যারজি বলে ডাকব।' কাদের জানান এরপর
আচমকা অমিতাভ বচ্চন হয়ে ওঠেন সকলের স্যারজি। কিন্তু কাদের খান তো তা বলতে পারেননি, তাই সরে এসেছিলেন।
শত্রুঘ্ন সিনহা যখন অমিতাভ বচ্চনকে
নিয়ে প্রকাশ করেছিলেন কিছু কথা
প্রবীণ অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা এবং
অমিতাভ বচ্চন সাতের দশকে একসঙ্গে বেশ কিছু ছবি করেছিলেন, যেগুলি সুপারহিট ছিল। এর মধ্যে রয়েছে 'নসিব', 'কালাপাত্থর', 'দোস্তানা', 'শান', 'দোস্ত', 'ইয়ার মেরি
জিন্দেগি'
উল্লেখযোগ্য। তাঁদের জুটিকে সিনেপ্রেমীরা খুব পছন্দ করত।
বিহারীবাবু শত্রুঘ্ন সিনহা তাঁর 'এনিথিং বাট খামোশ:
দ্য শত্রুঘ্ন সিনহা বায়োগ্রাফি'তে প্রবীণ অভিনেতা
শত্রুঘ্ন সিনহা বিগ বি-র সঙ্গে তাঁর খারাপ সম্পর্কের বিষয়ে বেশ কয়েকটি তথ্য
প্রকাশ করেছেন।
শত্রুঘ্ন সিনহা লিখেছেন, “অনেক ছবি ছিল যা আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম এবং সাইনিং
অ্যামাউন্টও ফেরত দিয়েছিলাম। 'পাত্থর কে লোগ' সহ বেশ কয়েকটি ছবি ছিল, যেগুলি আমি অমিতাভ বচ্চনের কারণে ছেড়ে দিয়েছিলাম। সমস্যা ছিল, আমি আমার অভিনয়ের জন্য সাধুবাদ পাচ্ছিলাম। আমি যে সাড়া
পাচ্ছিলাম তা অমিতাভ দেখতে পাচ্ছিলেন। সেই কারণেই তিনি আমাকে পরে আর কোনও ছবিতে
নিজের সঙ্গে চাননি।”
অমর সিং অমিতাভ বচ্চনকে 'লোভী' বলেছিলেন
একটা সময় ছিল যখন প্রয়াত
রাজনীতিবিদ অমর সিং এবং কিংবদন্তি অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন দারুণ বন্ধুত্বের উদাহরণ
ছিলেন। অমর-অমিতাভ ছিলেন বাস্তব জীবনের 'জয়-বীরু'। তবে এই বন্ধুত্বও ভেঙেছিল।
‘Editor of the parliamentarian.in’-এর সম্পাদকের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে অমর সিং অমিতাভ বচ্চন প্রসঙ্গে বলেছিলেন, "আমি অমিতাভ বচ্চনের জন্য যা কিছু করেছি, কোনও স্বার্থ নিয়ে করিনি, যেভাবে আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য করি সেইভাবেই করেছি। নিজেকে সান্ত্বনা
দেওয়ার হন্য আমি এই কথাই বোঝাই নিজেকে। ইংরেজিতে একটা কথা আছে 'Help the
needy, not the greedy'। আমি অমিতাভের কঠিন
সময়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছিলাম, কিন্তু আমার তাঁকে
যখন প্রয়োজন ছিল, তিনি অদৃশ্য হয়ে
গেলেন। তবে আমার দুঃখ নেই যে আমি তাকে সাহায্য করেছিলাম সেই জন্য।"
অমিতাভ বচ্চন ও রেখার পরকীয়া
অমিতাভ বচ্চন এবং রেখার সম্পর্কের
গল্প শুরু হয়েছিল ১৯৭৬ সালে 'দো আনজানে' ছবির সেটে। মিডিয়াতে জল্পনা ও প্রতিবেদন ছিল যে, জয়া বচ্চনের সঙ্গে বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও, রেখার সঙ্গে অমিতাভ বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন।
যাইহোক,
তাঁদের সম্পর্কের খবর শিরোনাম হয়েছিল যখন 'গঙ্গা কি সৌগন্ধ' (১৯৭৮) ছবির শুটিং চলছিল, তখন বিগ বি তাঁর
সহ-অভিনেতাকে চড় মেরেছিলেন। কারণ ওই অভিনেতা রেখার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলেন।
যদিও অমিতাভ বচ্চন এবং রেখা দুজনেই
মিডিয়ায় তাঁদের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছিলেন। কিন্তু কয়েক বছর পর অমিতাভ, তাঁর স্ত্রী অভিনেত্রী জয়া এবং বান্ধবী রেখাকে নিয়ে ‘সিলসিলা’ ছবিটি তৈরি করেন যশ
চোপড়া। পরে পরিচালক ছবিটি নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন, সেখানেই অমিতাভ এবং রেখার সম্পর্কের বিষয়টি নিশ্চিত
করেছিলেন বিশিষ্ট পরিচালক। 'বিবিসি'-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চলচ্চিত্র পরিচালক যশ চোপড়া বলেন, 'সিলসিলা'-এর সময় আমি
সারাক্ষণ ভয় পেয়েছিলাম, কারণ এটি ছিল
বাস্তব জীবন, যা রিল লাইফে দেখানো হচ্ছে। জয়া
অমিতাভের স্ত্রী এবং রেখা প্রেমিকা- এ যেন ঠিক বাস্তব জীবনের গল্প। তাই যে কোনও
কিছু ঘটার সম্ভাবনা ছিল।
এরপরই খবর আসতে শুরু করে রেখা ও
অমিতাভ গোপনে বিয়ে করেছেন। তবে একটি
সাক্ষাৎকারে অমিতাভ রেখার সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ককে সরাসরি প্রত্যাখ্যান
করেছিলেন। এরপর রেখা একটি সাক্ষাৎকারে অমিতাভের প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ করেন।
অমিতাভ বচ্চন যখন বি-গ্রেড ফিল্ম 'বুম'-এর অংশ হয়েছিলেন
বলিউডের 'শাহেনশাহ' অমিতাভ বচ্চনের জীবনে একটা সময় ছিল যখন পরিচালক কাইজাদ গুস্তাদের ছবি 'বুম'-এ অভিনয় ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির এত বড় তারকা হওয়া সত্ত্বেও বি-গ্রেডের ছবিতে কাজ করার পেছনের কারণ ছিল তাঁর এবং পরিবারের দেউলিয়া হয়ে যাওয়া। ২০০২ এবং ২০০৩ সালের দিকে গোটা বচ্চন পরিবার প্রবল আর্থিক সংকটে পড়েছিলেন।
আরও পড়ুন: ৬২ বছরের ঐতিহ্য ভেঙে কেন বদলানো হল অস্কারের রেড কার্পেটের রঙ
অমিতাভ বচ্চন চুম্বন করেছিলেন ৪৪
বছরের ছোট জিয়া খানকে
সর্বকালের সবচেয়ে বিতর্কিত
চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে একটি হল 'নিঃশব্দ'। সিনেমাটির পরিচালক ছিলেন রাম গোপাল ভার্মা। এই ছবির
প্রধান অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন এবং অভিনেত্রী জিয়া খানের মধ্যে ৪৪ বছরের বয়সের
ব্যবধান ছিল। এই দীর্ঘ বয়সের ব্যবধান সত্ত্বেও, ছবিতে তাদের সাহসী চুম্বন দৃশ্য দেখে মিডিয়ায় একটি বড় বিতর্ক তৈরি হয়েছিল।
এছাড়াও,
এমন খবর পাওয়া যায় যে জয়া বচ্চনও স্বামীর এমন একটি ছবিতে
অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তে বিরক্ত হয়েছিলেন।
৯০ কোটি টাকার ঋণে ডুবে গিয়েছিলেন
অমিতাভ বচ্চন
২০১৩ সালে 'মেল টুডে'-কে দেওয়া একটি
সাক্ষাৎকারে অমিতাভ বচ্চন সেই সময়ের কথা স্মরণ করেছিলেন যখন তাঁর প্রোডাকশন হাউজ 'অমিতাভ বচ্চন কর্পোরেশন লিমিটেড' (ABCL) ব্যর্থ হওয়ার পরে তাঁকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই
সময় অমিতাভের মাথায় ৯০ কোটি টাকার ঋণ ছিল।
তিনি বলেছিলেন, “আমি কখনওই ভুলতে পারি না যে পাওনাদাররা কীভাবে আমাদের দোরগোড়ায় আসত, গালাগালি, হুমকি দিত, দাবি-দাওয়া করত। কোনও সন্দেহ নেই, এটা ছিল আমার সবচেয়ে অন্ধকার মুহূর্তগুলির মধ্যে একটি। এই ঘটনা আমাকে ভাবতে বাধ্য করে আমার সামনে থাকা বিকল্পগুলি দেখতে। নিজেকে প্রশ্ন করতে উত্তর আসে, আমি তো অভিনয় করতে জানি। আমি উঠে যশজির কাছে গেলাম, তিনি আমার বাড়ির পিছনে থাকতেন। আমি তাঁর কাছে কাজ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম। তারপর 'মহব্বতেঁ' পেলাম।"