মিরিক শব্দটি এসেছে লেপচা শব্দ মির-ইওক থেকে। বাংলার এর অর্থ অগ্নিদগ্ধ
স্থান। নামের অর্থ যতই ভয়ানক হোক না কেন ছোট্টো এই শহরটি কিন্তু খুব সুন্দর দেখতে।
আগুন, ছাই, পোড়া কোনোকিছুর অস্থিত্বই এখানে পাবেন না। মধ্যবিত্ত বাঙালির সস্তায় সাহেবি
ভ্রমণের ঠিকানা দার্জিলিং। এখানকার আবহাওয়া, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং যাতায়াতের সুব্যবস্থার
জন্য ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে এটি বেশ জনপ্রিয়।
মিরিকের প্রধান আকর্ষণ সুমেন্দু হ্রদ। এই হ্রদের একদিকে রয়েছে সাবিত্রী
পুষ্প উদ্যান নামে বাগান এবং অন্যদিক পাইন গাছের জঙ্গল। হ্রদ মধ্যস্থ খিলান সাঁকো ইন্দ্রেনি
পুল দিয়ে বাগান থেকে পাইন বন এবং পাইন বন থেকে বাগানে পায়ে হেঁটে চলাচল করা যায়।দার্জিলিং
জেলার অন্ততম প্রধান ব্যবসায়িক কেন্দ্র হল এই মিরিক। মিরিক বাজারে আশপাশের গ্রাম এবং
চা বাগানের মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাবেচা করেন। সুমেন্দু হ্রদের পাশের
বাগানটি ছিল ব্রিটিশদের পোলো গ্রাউন্ড।
মিরিকের জলবায়ু সারাবছরই বেজায় মনোরম। গ্রীষ্মকালে খুব বেশি হলে এখানকার
তাপমাত্রা হয় ৩০° সেলসিয়াস এবং আর
শীতে তা নেমে দাঁড়ায় ১° সেলসিয়াসে।মিরিক
আদতে একটি পাহাড়িয়া মফঃস্বল। একে ঘিরে রয়েছে সৌমিরিনি, থার্বো, গোপালধারা এবং ফুগুরি
চা বাগান।
মিরিকের খুব কাছেই অবস্থিত বোকার গুম্ফা। তিব্বতিরা এখানে ভগবান বুদ্ধের
আরাধনা করেন। এটি একটি শান্ত এবং নিস্তব্ধ এলাকা। চারধারের পাইন গাছের জঙ্গল মিরিকের
সৌন্দর্যকে আরও রহস্যময় করে তোলে। আর রামিতে দারা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য তো ভাষায়
প্রকাশ করা যায় না। সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় দেখার জায়গার কমতি নেই মিরিকে।
মিরিকের প্রধান আকর্ষণ 'সুমেন্দু লেক'। লেকের উপর একটি ৮০ ফিট দীর্ঘ সাঁকো
দিয়ে হাঁটাচলা, জলে নৌকাবিহার এবং টাট্টু ঘোড়ায় চেপে লেকের চারপাশ প্রদক্ষিণ করার
ব্যবস্থা রয়েছে।বানকুলুং বা জয়ন্তী নগর অঞ্চলে ইকোট্যুরিজমকে জনপ্রিয় করার জন্য
উৎসাহ দেওয়া হয়। এখানে রয়েছে অনেকগুলি হোমস্টেও।
শপিং করতে চাইলে নেপালের পশুপতিনগর আদর্শ জায়গা। এটি নেপাল সীমান্তবর্তী
একটি জামাকাপড়, ইলেকট্রনিক্স এবং ঘরোয়া সামগ্রীর বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র।
মিরিকের ডন বসকো স্কুলের কাছেই অবস্থিত ডন বস্কো ক্যাথলিক চার্চ দার্জিলিং
জেলার অন্যতম সুন্দর এবং বড় ক্যাথলিক চার্চ।
নিরিবিলিতে থাকতে গেলে মিরিকের সুইস কটেজ বা মোটেল দারুণ জায়গা। শহরের ভিড়
থেকে দূরে মিরিকের সর্বোচ্চ উচ্চতায় অবস্থিত একটি খুবই সুন্দর লজ। বিভিন্ন বাজেটের
থাকার জায়গা। রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ট্যুরিস্ট লজও। খাঁটি বাঙালি খাবার যেমন পাবেন
তেমনই নেপালি গোর্খা তিব্বতি পদও মেলে এখানে। মিরিক লেকের কাছেই গরম গরম ফাস্ট ফুড
পরিবেশন করে বেশ কয়েকটি দোকান। তবে সূর্য ডোবার পর দোকানের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়।মিরিক
থেকে রিশপ, সিটং, লাভা, চটকপুর, গজলডোবা সহজেই যাওয়া যায়।