বাঙালির কাছে মহালয়া মানেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। দেবীপক্ষের ভোরে বীরূপাক্ষের গুরুগম্ভীর
কন্ঠে ‘আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জীর। ধরণীর বহিরাকাশে অন্তর্হিত মেঘমালা।
প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমনবার্তা।’ – যেন প্রকৃত অর্থে
বাঙালির মননে উমার আগমনের বার্তা বয়ে আনে। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠ ছাড়া যে মহালয়া
মর্মস্পর্শী হয় না তার জীবন্ত প্রমাণ বাঙালির অপর আবেগ উত্তম কুমারের ‘দুর্গা দুর্গতিহারিনী’র ব্যর্থতা। তাই বীরূপাক্ষের কন্ঠ
মানেই দেবীপক্ষের শুরু। তবে শুধু মহালয়াই নয় আরও নানা ক্ষেত্রে রেডিও-এ ব্যবহৃত হয়েছে
তাঁর কন্ঠস্বর। এমন কি ভারতের প্রথম স্বাধীনতা দিবসের ধারাবিবরণীও দিয়েছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ
ভদ্র।
১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট, ব্রিটিশদের ২০০ বছরের স্বৈরাচারী শাসন থেকে স্বাধীন হয়েছিল
ভারতবর্ষ। শহিদদের রক্তের বিনিময়ে পেয়েছিল বহুল প্রতীক্ষিত স্বাধীনতা। সেদিন যেন ভারতজুড়ে
আনন্দের রেশ। নিজের পায়ের তলার মাটি ফিরে পেয়েছে দেশবাসী। কলকাতার রাজপথেও উৎসবের আমেজ।
‘বন্দেমাতরম’, ‘জয় হিন্দ’ ধ্বনিতে মুখরিত হচ্ছে তিলোত্তমা। চারিদিকে
উড়ছে ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা। সেই প্রতিটি ঘটনার ধারাবিবরণী দিয়ে চলেছেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ
ভদ্র। তাঁর স্বভাবোচিত কন্ঠে তিনি বলে চলেছেন, “পথের চারিধারে শুধু জাতীয় পতাকার জয়যাত্রা,
চতুর্দিকে পত্র পুষ্পে তোড়ণ পতাকায় এতদিনের ঘুমন্ত রাজপুরী যেন সহসা উঠেছে জেগে। হিন্দু
মুসলমান সহসা যেন এক জাতীয়তার মন্ত্র দীক্ষিত। আজ যেন কোনও ভেদাভেদ কোনও বিরোধ নেই।”
আরও পড়ুন: Birendra Krishna Bhadra: ফুটবলের ধারাভাষ্য করতে গিয়ে হাসির পাত্র হয়েছিলেন বাঙালির আবেগের বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র
আরও পড়ুন: Mahalaya: আজ থেকে শুরু হল দেবীপক্ষ, এই সময় মেনে চলুন এই বাস্তু টোটকাগুলি
বীরূপাক্ষের কন্ঠে সেই ধারাবিবরণীও যেন শিহরণ জাগায়। শুধু স্বাধীনতা দিবস নয়,
এর আগে ১৯৪১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণের দিনও গোটা ঘটনার ধারাবিবরণী করেছিলেন
তিনি। সম্ভবত সেটাই ছিল রেডিও-তে ধারাবিবরণী দেওয়ার প্রথম প্রচেষ্টা। অরোরা ফিল্ম
কর্পোরেশনের কাছে রক্ষিত আছে মিথ হয়ে যাওয়া এই শোকভাষ্য। এছাড়াও রেডিওতে খেলার বাংলা
ধারাভাষ্য শুরু হয়েছিল বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের হাত ধরেই। যদিও সেই অভিজ্ঞতা খুব একটা
মধুর ছিল না।