রামায়ণের বিবরণ অনুযায়ী দেবী দুর্গার অকাল-বোধন ঘটিয়ে ছিলেন শ্রীরামচন্দ্র।
সে পুজো অবশ্য তিনি করেছিলেন বসন্তকালে। যা আজ বাসন্তিপুজো নামে পরিচিত। হিন্দুধর্মমতে
শরৎকালে শারদীয়ার আরাধনা প্রথম করেছিলেন রাজা সুরথ।
দুর্গাপুজোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চক্ষুদান। ছবি হোক বা লেখা, প্রতিবছর
এ নিয়ে বিস্তর চর্চা হয়। বর্তমানে মহালয়ার দিন দেবীর চক্ষুদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
যুগের সঙ্গে এই আচারের তিথিতে পরিবর্তন এসেছে। বারোয়ারি পুজো শুরু হওয়ার আগে সাধারণত
দুর্গা পুজো হত জমিদার বাড়ি বা রাজবাড়িতে। তাই জন্মাষ্টমীতে অনুষ্ঠিত হত দেবীর কাঠামো
পুজো। সেই সময় মহাসপ্তমীতে নবপত্রিকা স্নানের পর হত দেবীর চক্ষুদান। পরবর্তীতে চক্ষুদানের
দিন এগিয়ে আসে মহালয়ায়। দেবীর প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয় মহাসপ্তমীতে। বর্তমানে প্রতিমার সংখ্যা
বেশি। তাই মহাসপ্তমী তো দূরস্থ, মহালয়া পর্যন্তই শিল্পীরা অপেক্ষা করেন না। আগেই অঙ্কিত
হয় মহামায়ার চোখ।
আরও পড়ুন:Durga Puja: শর্তসাপেক্ষে দেওয়া যাবে দুর্গাপুজোয় সরকারি অনুদান, জানাল কলকাতা হাই কোর্ট
আরও পড়ুন:Durga Puja 2022: এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কোন ছয় নির্দেশিকা মেনে দেওয়া হবে দুর্গাপুজোর অনুদান
দেবীর চক্ষুদানের কিছু নিয়ম রয়েছে। শুদ্ধাচারে ডান হাতে কুশের অগ্রভাগ নিয়ে
দেবীকে প্রথমে কাজল পরানো হয়। প্রথমে তৃতীয় নয়নে, তারপর বাম চক্ষু এবং শেষে ডান চক্ষু
মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে অঙ্কন করা হয়। এই চক্ষুদানের পরই প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠিত
হয়। এর আলাদা বীজমন্ত্র রয়েছে। চক্ষুদান ও প্রাণপ্রতিষ্ঠার ফলে মৃন্ময়ী থেকে চিন্ময়ী
রূপ পান মা। মাটির প্রতিমা থেকে উত্থিত হন রক্তমাংসের শরীরে।
রামচন্দ্রের অকালবোধন নয়নের একটি ভূমিকা রয়েছে। তবে তার সঙ্গে চক্ষুদানের
কোনও যোগ নেই। এ গল্প মূলত নবমী পুজোর। কৃত্তিবাসী রামায়ণে এই বিষয়ে বিস্তর বর্ণনা
পাওয়া যায়। বনফুল ও বনফলে পুজোর আয়োজন করেও যখন দেবীকে জাগ্রত করতে পারলেন না তখন
বিভীষণের পরামর্শে নীলপদ্মে পুজোর আয়োজন করলেন সীতাপতি। নীলপদ্ম দুর্লভ, দেবতারাও তার
খোঁজ রাখেন না। পৃথিবীতে একমাত্র দেবীদহ নামক হ্রদেই নীলপদ্ম মেলে। মহাবলী হনুমানের
সাহায্যে জোগার হল নীলপদ্ম। এদিকে দেবী পড়লেন বিপদে। তিনি রাবনকে কথা দিয়েছেন রামকে
সাহায্য করবেন না। তাই ছলনা করে একটি পদ্ম লুকিয়ে রাখলেন দুর্গা। এদিকে রামও ছাড়ার
পাত্র নন। রঘুপতিকে সকলে পদ্মলোচন বলে সম্বোধন করতেন। তাই নীলপদ্মের বদলে রাম নিজেরই
একটি চোখ উপড়ে ফেলতে উদ্যত হলেন। বাধ্য হয়েই দুর্গা রামচন্দ্রকে রাবণ বধের বর দিলেন।
যাওয়ার আগে বলে গেলেন,
অকালবোধনে পূজা কৈলে তুমি দশভূজা
বিধিমতে করিলা বিন্যাস।
লোকে জানাবার জন্য আমারে করিতে
ধন্য
অবনীতে করিলে প্রকাশ।
অবশেষে সম্পন্ন হল রামের নবমী পুজো। এই গল্পের সঙ্গে চক্ষুদানের কোনও যোগ
নেই। নেহাত গল্প হিসেবেই বলা।