হাসনাবাদের
বসিরহাট সংলগ্ন রামেশ্বরপুরের ঘোষবাড়ির দুর্গাপুজো এক বিখ্যাত পুজো। গদাধর ঘোষ এই পুজো প্রথম শুরু করেন।
এই পুজো শুধু ঘোষবাড়ির
নয়, গোটা গ্রামের পুজো। সারা গ্রামের লোক পুজোর ক’দিন একত্রিত হন ঘোষবাড়িতে। মানতও
করেন অনেকে। তাঁদের বিশ্বাস ঘোষবাড়ির দুর্গার কাছে নিষ্ঠা ভরে করা মানত বিফলে যায় না।
তাই পুজোর সময় আলোয় আলোকিত করা হয় গোটা গ্রাম। যেন এক মহোৎসব চলে রামেশ্বপুরে। পুলিশি
পাহারায় সুসম্পন্ন হয় সম্পূর্ণ পুজো।
প্রতিপদ থেকেই উমা আরাধনা শুরু হয় ঘোষবাড়িতে।
শাস্ত্রে দেওয়া সময়ের ও রীতির এক চুলও এদিক ওদিক হয় না। বাড়ির দুর্গা মন্দিরেই তৈরি
করা হয় প্রতিমা। নারী ও পুরুষ শিল্পীরা একসঙ্গে নির্মাণ কাজে অংশ নেন। লিঙ্গ বৈষম্য
দূরীভূত করা এই বাড়ির এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য। গঙ্গা জলের পাশাপাশি ভাদ্র ও আশ্বিন মাসের
বৃষ্টির জল পিতলের পাত্রে সংরক্ষণ করে ব্যবহৃত হয় পুজোর কাজে। প্রতিপদ থেকে দশমী অবধি
রীতি নীতি মেনে হয় মায়ের পুজো। পশুবলির নিয়ম নেই। শাস্ত্র মেনে ফল বলি দেওয়া হয় মায়ের
সামনে।
এই বাড়ির দশমীর রীতি বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ।
কাঁধে করে বিসর্জনের পথে নিয়ে যাওয়া হয় ঘোষবাড়ির উমাকে। গোটা গ্রামের মানুষ মিলে এগিয়ে
আসেন মাকে কাঁধে নিতে। গোটা গ্রামের মহিলারা লাল পেড়ে সাদা শাড়িতে মেতে ওঠেন সিঁদুর
খেলায়। এই বাড়ির বিশ্বাস পুরাণ বলে, বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার সময় উমা নাকি
‘নেয়ে খেয়ে’ অর্থাৎ স্নান করে ও খেয়ে আসেন না। সেই রীতি পালন করেন এই বাড়ির মেয়েরাও।
ইছামতী নদীতে বিসর্জন হয় মায়ের। তুহিনবাবু
জানান, সেই সময়ের নাকি কিছুক্ষণের জন্য বিএসএফের পক্ষ থেকে খুলে দেওয়া হয় কাঁটা তারের
বেড়া। বিসর্জনের সুরেই একাকার হয় এপার বাংলা ওপার বাংলা।
পরিচালক তরুণ মজুমদারও তাঁর পুরস্কারপ্রাপ্ত
ছবি ‘নিমন্ত্রণ’র শুটিং-এর জন্য বেছে নিয়েছিলেন বসিরহাটের ঘোষবাড়িকেই। এই বাড়িতে শ্যুট
করা হয়েছিল দুর্গাপুজোর বেশ কিছু দৃশ্য। এছাড়াও বেশ কিছু ধারাবাহিকেরও শুটিং হয়েছিল
এই বাড়িতেই। সাংস্কৃতিক কাছে সহযোগিতার পাশাপাশি সমাজকল্যাণমূলক কাজেও স্বেচ্ছায় যোগদান
করেন ঘোষবাড়ির সদস্যরা। বস্ত্রদান, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, চিকিৎসাকেন্দ্র নির্মাণ, দরিদ্রদের
পাশে দাঁড়ানর মত নানা কাজ করেন সকলে।