ভগবান গৌতম বুদ্ধ বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বিশ্বাস
করা হয় যে এই দিনেই তিনি বোধি লাভ করেছিলেন। তাই প্রতি বছর বৈশাখ পূর্ণিমার দিনটি
বুদ্ধ জয়ন্তী ও বুদ্ধ পূর্ণিমা হিসেবে পালিত হয়। ভগবান বুদ্ধকে নারায়ণের নবম অবতার
মনে করা হয়। বুদ্ধদেব বৌদ্ধ ধর্মের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন, যা আজ সারা বিশ্বে পরিচিত।
বর্তমানে ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, উত্তর কোরিয়া, চিন, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড,
কম্বোডিয়া, হংকং, মঙ্গোলিয়া, তিব্বত, ভুটান, মায়ানমার এবং শ্রীলঙ্কা সহ বহু দেশে
বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা বাস করে। এবার ৫ মে বুদ্ধ পূর্ণিমা পড়ছে। এই উপলক্ষ্যে জেনে
নিন ভগবান গৌতম বুদ্ধ সম্পর্কিত বিশেষ কিছু কথা।
ভগবান গৌতম বুদ্ধ নেপালের লুম্বিনিতে এক রাজপরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সিদ্ধার্থের
জন্মের মাত্র সাত দিন পর তাঁর মা মারা যান। মায়ের মৃত্যুর পর সিদ্ধার্থর মাসি গৌতমী
তাঁকে লালন পালন করেন। গৌতম বুদ্ধের বাল্য নাম ছিল সিদ্ধার্থ। মাসি গৌতমীর মানুষ করেছিলেন
বলেই তাঁর নাম হয়েছিল গৌতম।
বুদ্ধের জন্মের পর অসিতা নামে এক জ্যোতিষী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে এই
শিশুটি বড় হয়ে একজন মহান ধর্মগুরু হবে এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করবে। সবাইকে সত্যের
পথ দেখাবে। এই ভবিষ্যদ্বাণী সত্য যাতে না হয় তার জন্য গৌতমের পিতা শুদ্ধোধন অনেক চেষ্টা
করেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিদ্ধার্থ বৈরাগ্যকেই বেছে নেন। ২৭ বছর বয়সে সিদ্ধার্থ
তাঁর গৃহ এবং রাজকীয় সুখ ত্যাগ করেন।
সন্ন্যাসী হওয়ার পর ভগবান বুদ্ধ সারনাথে প্রথম ধর্মোপদেশ দেন। এখানে তিনি
চারটি মহৎ সত্যের শিক্ষা দেন। এই চারটি মহৎ সত্যই বৌদ্ধ ধর্মের সারাংশ। প্রথম মহৎ সত্য
হল ‘দুঃখ’। এর অর্থ এ সংসার দুঃখে পরিপূর্ণ', দ্বিতীয়টি হল ''দুঃখসমোদয়’, মানে দুঃখের
কারণ রয়েছে, তৃতীয়টি হল 'দুঃখ-নিরোধ’ মানে দুঃখের অবসান সম্ভব এবং চতুর্থ আর্যসত্য
হল 'দুখ-নিরোধ-মার্গ মানে দুঃখের অবসান'।
একজন বৃদ্ধ, একজন রোগী, একজন আর্ত এবং একজন সন্ন্যাসীকে দেখে গৌতম বুদ্ধের
মনে অনাগ্রহের অনুভূতি এসেছিল। নগর পরিভ্রমণের সময় তিনি তাঁর সারথিকে এই সমস্ত সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তখন সারথি বলেছিলেন যে জীবনে বার্ধক্য এলে মানুষ রোগী হয়। তারপর
মারা যায়। একমাত্র সন্ন্যাসীই যিনি মৃত্যুর পরেও জীবনের সন্ধান করে চলেন। একথা শোনার
পর সিদ্ধার্থের মনে রাজকীয় ভোগ-বিলাস ত্যাগ করে ত্যাগের চিন্তা আসে।
৩৫ বছর বয়সে সিদ্ধার্থ বিহারের বোধগয়ায় একটি বটগাছের নীচে জ্ঞানলাভ করেন।
কথিত আছে আজও এই গাছের অস্তিত্ব রয়েছে। এটিকে এখন বোধিবৃক্ষ বলা হয়।
সন্ন্যাসী হওয়ার পর ভগবান বুদ্ধ মানুষকে বুঝিয়েছিলেন যে শুধু মাংস ভক্ষণকারীই
অপবিত্র নয়, যে ব্যক্তি রাগ, ব্যাভিচার, ছলনা, কপট, হিংসা ও অন্যের নিন্দা করে সেও
অপবিত্র। মনকে পরিশুদ্ধ করতে হলে এসব অভ্যাস ত্যাগ করা প্রয়োজন। এই কারণেই বুদ্ধের
শিক্ষাকে স্মরণ করে বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন মানুষ দরিদ্র ও অক্ষমদের জন্য প্রয়োজনীয়
জিনিস দান করে এবং খাঁচা থেকে পাখিদের মুক্ত করে।