১৯৯৯ সালের মে থেকে জুলাই, ভারত দেখেছিল কার্গিল
যুদ্ধ। জম্মু ও কাশ্মীরের কার্গিল জেলায় নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর লড়াই হয়েছিল
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে। এই যুদ্ধে ভারত বিজয় লাভ করে। তাই ২৬ জুলাই দিনটিকে কার্গিল যুদ্ধের শহিদ সেনাদের
উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। আজ কার্গিল যুদ্ধ সম্পর্কে জেনে নেওয়া
যাক কয়েকটি আশ্চর্যজনক তথ্য।
কার্গিল যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল জম্মু ও
কাশ্মীরের কার্গিল জেলায় নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী শীতকালে
অনুপ্রবেশকারীদের ছদ্মবেশে সৈন্য পাঠিয়েছিল এলাকাটি দখল করতে। তাদের মূল উদ্দেশ্য
ছিল লাদাখ ও কাশ্মীরের মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা। ভারতীয় সীমান্তে উত্তেজনা
সৃষ্টি করা। অবশেষে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হয়। পাকিস্তানি সৈন্যরা নিয়ন্ত্রণ
রেখা অর্থাৎ এলওসি অতিক্রম করে ভারত নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রবেশ করে।
কার্গিল ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের আগে
লাদাখের বাল্টিস্তান জেলার অংশ ছিল। ১৯৪৭-৪৮, প্রথম কাশ্মীর যুদ্ধে সেটি লাইন অব
কন্ট্রোল দ্বারা পৃথক হয়েছিল।
৩রা মে ১৯৯৯-এ পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু করার
সময় তারা প্রায় ৫০০০ সৈন্য নিয়ে কার্গিলের পাথুরে পাহাড়ি অঞ্চলে উচ্চ উচ্চতায়
অনুপ্রবেশ করে এটির দখল নিয়েছিল। ভারত সরকার যখন এই তথ্য জানতে পারে তৎক্ষণাৎ 'অপারেশন বিজয়'-এর সিদ্ধান্ত নেয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী
অনুপ্রবেশকারীদের যোগ্য জবাব দেয়।
১৯৭১ সালে কার্গিল যুদ্ধের আগে ভারত ও
পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হয়। বলা যায়, তার ফলেই জন্ম হয় স্বাধীন বাংলাদেশ
রাষ্ট্রের।
আসুন জেনে নেওয়া যাক কার্গিল যুদ্ধের
আগের দৃশ্য কী ছিল। ১৯৯৮-১৯৯৯ সালের শীতে, সিয়াচেন হিমবাহকে নিজেদের দাবি করার লক্ষ্যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গোপনে
এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করতে কার্গিলের কাছে সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দিতে এবং
প্রেরণ করতে শুরু করে। তারা চিৎকার করে বলেছিল যে তারা পাকিস্তানি সৈন্য নয়,
তারা মুজাহিদিন। প্রকৃতপক্ষে, পাকিস্তান এই
বিরোধের প্রতি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছিল যাতে সিয়াচেন হিমবাহ
অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপর চাপ সৃষ্টি করা যায়
এবং ভারতকে কাশ্মীর বিরোধের জন্য আলোচনায় বসতে বাধ্য করা যায়।
যুদ্ধের পেছনেও একটি গল্প ছিল। ১৯৭১
সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর অনেক সামরিক সংঘর্ষ হয়েছে। উভয় দেশই ১৯৯৮ সালে
পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছিল যা উত্তেজনাকে প্রশমিত করে তুলেছিল। ১৯৯৯ সালের
ফেব্রুয়ারিতে পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য, দুই দেশ কাশ্মীর সংঘাতের একটি শান্তিপূর্ণ ও দ্বিপাক্ষীয় সমাধান প্রদানের
প্রতিশ্রুতি দিয়ে লাহোর ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে।
আরও পড়ুন: East-West Metro: ফের বন্ধ হয়ে গেল ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ
আরও পড়ুন: World Record: ৫০ বছর ধরে রোজ বার্গার খেয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়লেন এই বৃ্দ্ধ
কিন্তু আসলে যা ঘটল তা হল, পাকিস্তানি
সশস্ত্র বাহিনী তার সৈন্য এবং আধাসামরিক বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতীয়
অঞ্চলে পাঠাতে শুরু করে। এই অনুপ্রবেশের কোডনেম ছিল ‘অপারেশন বদর।’ এর মূল
উদ্দেশ্য ছিল কাশ্মীর ও লাদাখের মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা এবং সিয়াচেন হিমবাহ
থেকে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহার করা। একই সময়ে, পাকিস্তান বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল যে এই এলাকায় যে কোনও ধরনের উত্তেজনা
তৈরি করা কাশ্মীর ইস্যুকে একটি আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত করতে সাহায্য করবে এবং দ্রুত
সমাধান নিশ্চিত করতেও সহায়তা করবে।
কার্গিল যুদ্ধ এমন একটি যুদ্ধ যেখানে
দুটি পারমাণবিক রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল। স্থল আক্রমণের জন্য আইএএফ,
মিগ-২আই, মিগ-২৩, মিগ-২৭,
জাগুয়ার এবং মিরাজ-২০০০ বিমানের ব্যবহার করা হয়েছিল।
কার্গিল যুদ্ধে প্রচুর পরিমাণে রকেট এবং
বোমার ব্যবহার হয়েছিল। প্রায় দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার শেল,
বোমা, রকেট ছোড়া হয়েছিল। প্রায় ৫০০০
আর্টিলারি শেল, মর্টার বোমা এবং রকেট প্রতিদিন ৩০০টি বন্দুক,
মর্টার এবং এমবিআরএল থেকে ছোড়া হয় এবং টাইগার হিল পুনরুদ্ধারের
দিন ৯০০০টি শেল ছোড়া হয়। বলা হয় যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই একমাত্র
যুদ্ধ যেখানে শত্রুসেনার উপর এই বিশাল সংখ্যক বোমাবর্ষণ করা হয়েছিল। অবশেষে ভারত
নিশ্চিত জয়ের স্বাদ পায়।