লড়াইটা চ্যাম্পিয়ন বনাম রানার্সের। বৃহস্পতিবার আইএসএলে ফতোরদা স্টেডিয়াম
তাই সাক্ষী থাকতে চলেছে এক জমজমাট যুদ্ধের। তবে চলতি মরশুমে ধারাবাহিকতার নাম-গন্ধও
নেই দুটি দলের। গতবারের রানার্সআপ চেন্নাইয়িন সিটি এফসি বেশ খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়েই
যাচ্ছে। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসাবে অ্যান্তোনিও হাবাসের উপর বাজি ধরার সাহস এবার
কেউ দেখাবেন বলে তো মনে হয় না। টানা দুই ম্যাচ জয়হীন এটিকে মোহনবাগান। এই অবস্থায় ফুটবলারদের
আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে যেন তেন প্রকারে জয়কেই পাখির চোখ করছে
বাগান থিঙ্ক ট্যাঙ্ক।
গত ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে বেশ নজরকাড়া ফুটবল উপহার দিয়েছে দক্ষিণের
দলটি। ফলে বাগান হেডস্যার হাবাসের সামনে চ্যালেঞ্জটা যে বেশ কঠিন হতে চলেছে, তা আর
বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রথমে মুম্বই সিটি এফসি’র বিরুদ্ধে ১-০ গোলে হার। পরের ম্যাচে
এফসি গোয়ার সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র। টানা দুই ম্যাচে জয় না পাওয়ায় দলের আত্মবিশ্বাসেও কিছুটা
চিড় ধরেছে। কারণ, তার আগের পাঁচ ম্যাচে হারের মুখ দেখতে হয়নি সবুজ-মেরুন ব্রিগেডকে।
তাই চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে ফের জয়ের সরণিতে ফিরে আসতে না পারলে প্রবল চাপে পড়ে যাবে কলকাতার
এই প্রধান।
১১ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট নিয়ে এই মুহূর্তে পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয়
স্থানে রয়েছে মোহন শিবির। শীর্ষে থাকা মুম্বইয়ের থেকে পাঁচ পয়েন্টে পিছিয়ে তারা। তবে
তিন নম্বরে গোয়া কিন্তু কলকাতার দলটির ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। এক ম্যাচ বেশি খেলে ১৯
পয়েন্ট গোয়ার।
এদিকে, ১২ ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট সংগ্রহ করে টেবিলের ছয় নম্বর স্থানে রয়েছে চেন্নাইয়িন।
শেষ তিন ম্যাচে হারের মুখ দেখেনি তারা। ফলে হারানো মনোবল ফিরিয়ে এনে অনেকটাই চাঙ্গা
চেন্নাই শিবির। শেষ চারে জায়গা করে নিতে হলে তাই জয়ের ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প রাস্তা
খোলা নেই তাদের সামনে।
একটা ব্যাপারে দুই দলই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে। প্রচুর সুযোগ তৈরি করতে পারলেও
সেগুলো গোলে পরিণত করতে পারছে না দুই দলের স্ট্রাইকাররা। গত পাঁচটি ম্যাচে মাত্র চারটি
গোল পেয়েছে এটিকে মোহনবাগান। চেন্নাইয়িন এফসি গত পাঁচ ম্যাচে তিন গোল করেছে। দুই দলের
প্রথম লেগের ম্যাচও গোলশূন্য ভাবে শেষ হয়েছিল। শুরুটা যেভাবে করেছিলেন রয় কৃষ্ণা, টুর্নামেন্টের
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখন ফর্ম হাতড়ে বেড়াচ্ছেন ফিজির ফরোয়ার্ড। গোলের খরা চলছে চেন্নাইয়িন
এফসি-র স্ট্রাইকার এসমায়েল গঞ্জালভেজেরও।
গত ম্যাচে ফ্রিকিক থেকে অসাধারণ একটি গোল করেছিলেন বাগানের অন্যতম স্ট্রাইকার
এডু গার্সিয়া। এদিন তিনি বলেন, ‘আমার কাছে নিজের গোলের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ দলের
জয়। ভাল গোল করলে তো আনন্দ হয়ই। কিন্তু ম্যাচ জিতলে সেই গোল আসল মর্যাদা পায়। গত ম্যাচে
আমার গোলটার পরে যদি আমরা গোল না খেতাম, তা হলে অনেক বেশি আনন্দ পেতাম”।
বৃহস্পতিবার চেন্নাইয়িন এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচ নিয়ে গার্সিয়া বলেন, ‘আমরা
এমন দুটো দলের বিরুদ্ধে পাঁচ পয়েন্ট নষ্ট করেছি, যারা এই লিগের দুই সেরা দল। তবু আমরা
দুইয়ে রয়েছি। আগের ম্যাচগুলো নিয়ে আর ভাবতে চাই না। চেন্নাই শক্তিশালী দল। তা সত্ত্বেও
আমাদের যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস রয়েছে। মাত্র পাঁচটা গোল খেলেও গতবারের মতো বেশি গোল করতে
পারিনি আমরা। এই জায়গাটাতেই উন্নতি দরকার আমাদের।’
শেষ দুই ম্যাচে জয়হীন থাকায় কি চাপে পড়ে গিয়েছে দল? বাগান হেডস্যার এই তত্ত্ব
মানতে নারাজ। হাবাস পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, ‘পাঁচ পয়েন্ট খোয়া যাওয়ায় কোনও চাপ নেই।
ভালো-খারাপ সময় আসেই। গোয়া ও মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ
ওদের লিগ জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আমাদের ভালো খেলে যেতে হবে। টেবিলের উপরের দিকে
থাকতে হবে। সেই জন্য আমাদের আক্রমণে আরও উন্নতি করতে হবে”। তিনি আরও বলেন, ‘একটা ম্যাজিক
ওয়ার্ড আছে, ব্যালান্স। আক্রমণ ও রক্ষণের মধ্যে আরও ভারসাম্য আনা দরকার। গোল করতে হবে
আমাদের। ৩০ গোল করলাম, অথচ ২৫ গোল খেয়ে বসে রইলাম, এটা মোটেই পছন্দ নয় আমার। মুম্বই
ম্যাচের পরে আমাদের গোলের গড় নেমে গিয়েছে। আক্রমণ নিয়েই শুধু চিন্তিত আমি।’
চিন্তিত হওয়ারই কথা। কারণ, চলতি আইএসএলে সবচেয়ে কম গোল করা দলগুলির তালিকায়
এটিকে মোহনবাগান দুই নম্বরে রয়েছে। এক নম্বরে চেন্নাইন এফসি (১০), দুইয়ে কলকাতার দুই
প্রধান (১১) এবং তিন নম্বরে ওড়িশা এফসি (১২)।
স্ট্রাইকারদের ব্যর্থতা তো একাবাক্যে মেনে নিলেন সকলেই। তবে দলের ফরোয়ার্ডদের
খাটো করতে নারাজ বাগানের স্প্যানিশ কোচ। রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামসের প্রতি যে অগাধ
আস্থা রয়েছে তাঁর, সেটাও জানাতে ভোলেননি তিনি। চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে দলকে যে জয়ের জন্যই
ঝাঁপাবে, সেটাও বেশ ভালো মতো বোঝা গেল হাবাসের বক্তব্য থেকে।