কবি বলে গিয়েছেন জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে। কবি এও বলেছেন, কিন্তু
যদি রাখো মনে নাহি মা ডরি শমনে... হ্যাঁ মৃত্যুর পরেও যাদের মনে রাখা যায় তাঁরাই আসলে
জীবিত৷ জীবনের পাঠ তাঁরা শিখিয়ে যান, জীবনকে উপভোগ করতে শিখিয়ে যান, শিখিয়ে যান কর্মই
ধর্ম। ঠিক যেমনটা মনে করতেন বাঙালির আজন্মলালিত অপু, বা পাড়ার রকে আড্ডা মেরে সুযোগ
পেলেই টুইস্ট নাচা মন্টু। অথবা পারিশ্রমিকের কথা না ভেবে সম্পূর্ণ অচেনা অজানা এক সাত
বছরের শিশুর জন্য মরুভূমির বালিয়ারিতে দুষ্টু লোকেদের খুঁজতে যাওয়া ফেলুদা। এই চরিত্রগুলি
সবই আপামর বাঙালি সিনেপ্রেমী, বিশ্ব সিনেপ্রেমীর মনের মনিকোঠায় থাকা সদ্য প্রয়াত অভিনেতা
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়েরই এক একটি রূপ। কিংবদন্তি শিল্পীর ৮৬ তম জন্মবার্ষিকীতে তাই
'মুখোমুখি' নাট্যগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়েছে সৌমিত্র ৮৬।
১৯ জানুয়ারি মঙ্গলবার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় স্মরণে আকাদেমি অফ ফাইনার্টসে
অনুষ্ঠিত হল হল এক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। 'মুখোমুখি' নাট্যগোষ্ঠীটির সঙ্গে বহু বছর ধরে
জড়িয়ে ছিলেন কিংবদন্তী নাট্যব্যক্তিত্ব সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এখনও এর অংশ হয়ে রয়েছে
প্রবাদপ্রতীম শিল্পীর কন্যা নাট্যশিল্পী পৌলমী বসু। তাই সৌমিত্রকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এই
সন্ধ্যার আয়োজন করেছিলেন 'মুখোমুখি' র সদস্যরা।
এদিনের অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার ও
পণ্ডিত তন্ময় বসুর সরোদ ও তবলার যুগলবন্দি। হেমন্ত কল্যাণ রাগ দিয়ে সূচনা হয় অনুষ্ঠানের।
সিনেমা, নাটকের পাশাপাশি সঙ্গীতময় ছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবন। তাই নাটক বা সিনেমা
নয়, মুখোমুখির সদস্যরা শ্রদ্ধা জানাতে বেছে নিয়েছেন সঙ্গীতকে। অনুস্থানে উপস্থিত ছিলেন
দেবশঙ্কর হালদার এবং বিশ্বনাথ বসু। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে স্মরণ করে পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ
মজুমদার বলেন, “সৌমিত্র বাবু চলে যাওয়াই অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে আমাদের। তিনি ঠিক যতটা
নাটক, সিনেমা নিয়ে চর্চা করতেন ঠিক ততটাই গান নিয়েও চর্চা করতেন। ওনার সঙ্গে আমি কয়েকটা
কাজ করেছি। তার মধ্যে একটিতে নাসিরুদ্দিন শাহ রয়েছেন। সেখানে আমি দেখেছি একজন বাঙ্গালিকে
নাসিরুদ্দিন কতটা সন্মান দিতেন।”