কানাডার ট্রিনিটি উপকূলের কাছে একটি ছোট এবং ছিমছাম গ্রাম।
সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে রয়েছে গ্রামটি। মূলত মৎস্যজীবীদের বাস। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয়, হন্যে হয়ে খুঁজলেও কোনও মানুষের দেখা পাবেন না এই গ্রামে। পোস্ট অফিস,
গির্জা, কবরস্থানের দেখা মিলবে গ্রামে। ঠিক
যেন আদর্শ কোনও গ্রাম। শুধু এই একটি গ্রামই নয়, নিউফাউন্ডল্যান্ড
এবং ল্যাব্রাডরে এমন জনমানবহীন ৩০০টি ভূতুড়ে গ্রাম রয়েছে। ১৯৫৪ থেকে ১৯৭৫ সালের
মধ্যে একটি সরকারি প্রকল্প কেন্দ্র করে ৩০০ গ্রামের মোট ৩০ হাজার বাসিন্দাদের
অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পর থেকে এই ভাবেই ধুধু করছে গ্রামগুলি।

নিউফাউন্ডল্যান্ড এবং ল্যাব্রাডর অনেকটা বিস্তৃত, প্রত্যন্ত এবং আশপাশের অন্য অঞ্চলের থেকে একটু স্বতন্ত্র এলাকা। এখানে
অদ্ভূত নামের সব গ্রাম রয়েছে। কোনও গ্রামের নাম ‘কাম বাই
চান্স’, কোনওটার নাম ‘হার্টস ডিসায়ার’,
‘হ্যাপি অ্যাডভেঞ্চার’ কিংবা ‘চিমনি টিকল’। এই গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের মূল জীবিকা
ছিল মাছ শিকার করা। পাশাপাশি থাকা গ্রামগুলির মধ্যেও যোগাযোগ প্রায় ছিল না বললেই
চলে। খুব সরল জীবনযাপন করতেন বাসিন্দারা। কিন্তু ১৯৪৯ সালে ওই মানুষগুলোর জীবন
বদলে যায়। তখন গ্রেট ব্রিটেনের হাত ছেড়ে কানাডার অধীনে চলে আসে
নিউফাউন্ডল্যান্ডএবং ল্যাব্রাডরের গ্রামগুলো।

এর পর কানাডার প্রশাসনের নজর পড়ে এই সমস্ত প্রত্যন্ত এবং
পৃথক গ্রামগুলির উপর। জনকল্যাণ এবং মৎস্য দফতরের উপর গ্রামগুলির উন্নয়নের দায়িত্ব
পড়ে। সমীক্ষা করার জন্য আমলারা গ্রামগুলিতে গিয়ে রীতিমতো অবাক হয়ে যান। সেখানে
এমন গ্রামও রয়েছে, যেখানে কেউ পড়াশোনা জানেন না। চিকিৎসার
কোনও ব্যবস্থা পর্যন্ত নেই। ‘কাম বাই চান্স’ গ্রামে যেমন চিকিৎসার ব্যবস্থা হিসাবে একটি ছোট কটেজ রয়েছে, কিন্তু কোনও চিকিৎসক নেই। আরও প্রত্যন্ত কয়েকটি গ্রামে সপ্তাহে একবার
সাধারণ অসুখের ওষুধ নিয়ে পৌঁছয় একটি নৌকা। কখনও কখনও চিকিৎসকও চলে আসেন নৌকা চেপে।
কয়েক ঘণ্টা গ্রামে ঘুরে চিকিৎসা করে ফের ফিরে যান।

মাত্র ১৪টি পরিবার নিয়ে গড়ে ওঠা একটি প্রত্যন্ত গ্রামেরও
সন্ধান পান তাঁরা। যে গ্রামে যাওয়ার কোনও রাস্তা পর্যন্ত নেই। চাষাবাদ সম্বন্ধেও
সে ভাবে জানেন না সেখানের বাসিন্দারা। মাছ শিকারই তাঁদের একমাত্র ভরসা। গ্রামবাসীদের
অত্যন্ত সরল জীবনযাত্রায় ফের বদল আসে ১৯৫৭-এ।