সালটা ১৯২৯। নৈহাটির খ্যাতনামা
ডাক্তার সাধন কুমার মিত্রের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন সঙ্গীত জগতের এক রত্ন। ছোটবেলা
থেকে পড়াশোনার থেকেও গানবাজনার প্রতি বেশি ঝোঁক ছিল ছেলেটার। বাবা চাইতেন ছেলে
পড়াশোনা করে তাঁরই মতো প্রসিদ্ধ ডাক্তার হোক। ছেলের ইচ্ছা আবার গানবাজনার জগতে
প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। গান ছাড়া যেন নিজেকে ভাবতেই পারে না সে। তাই বাবার শত আদেশেও
কোনওমতেই গান ছাড়তে পারল না ছেলে। ফলে বাবা রেগে গিয়ে বাড়ি থেকেই বের করে দিলেন
ছেলেকে। তারপরই শুরু হয় তাঁর সংগ্রাম। ক্রমেই তিনি হয়ে ওঠেন সঙ্গীত জগতের উজ্জ্বল
নক্ষত্র। সেই ছেলেটা আর কেউ নন শ্রদ্ধেয় শ্যামল মিত্র।
স্নাতক পাস করার পর কলকাতায় চলে
আসেন শ্যামল মিত্র। সেখানে এসে তাঁর দেখা হয় সুধীরলাল চক্রবর্তীর সঙ্গে, যা এক লহমায় বদলে দেয় তাঁর জীবন। তাঁর হাত ধরেই ১৯৪৯ সালে ‘সুনন্দার বিয়ে’ ছবিতে প্রথম প্লে-ব্যাক করার সুযোগ
পান তিনি। সুধীরলাল চক্রবর্তীর মৃত্যুর পর ১৯৫২ সালে তাঁর স্মৃতিতে তিনি গেয়েছিলেন
‘স্মৃতি তুমি বেদনার’। এরপর গড়গড়িয়ে
এগোতে থাকে তাঁর সঙ্গীতের জয়যাত্রা। বিভিন্ন শিল্পীদের মাঝেও জ্বল জ্বল করতে থাকে
তাঁর প্রতিভা। তাঁর গানের কলি আজও জীবন্ত মানুষের মনের মণিকোঠায়।
পঞ্চাশের দশক থেকে সুরকার হিসাবে
যাত্রা শুরু করেন কিংবদন্তী। ‘জয় মা কালী’, ‘জমালয়ে
জীবন্ত মানুষ’, ‘ভ্রান্তি বিলাস’ ইত্যাদি
একাধিক ছবিতে সুর তৈরি করেন তিনি। ১৯৬৩ সালে ‘দেয়া নেয়া’
ছবিটির প্রযোজনা করেন তিনি। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি শ্যামল
মিত্রকে। মুম্বই থেকেও ডাক আসে তাঁর। সলিল চৌধুরী, মান্না দে,
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মতো একাধিক নামজাদা শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেন
তিনি। তাঁর সৃষ্টি আজও অমর মানুষের হৃদয়ে।
আরও পড়ুন: অবশেষে কোভিড মুক্ত রাজ-শুভশ্রী
আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্ত অভিনেত্রী স্বস্তিকা
এসবের মাঝেই ঘটে যায় এক দুর্ঘটনা।
১৯৬৯ সালে অ্যাকসিডেন্ট হয় তাঁর। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন। পরবর্তীতে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও বাড়িতে কাটতে থাকে জীবন। এই পরিস্থিতিতে আর কি ফিরতে
পারবেন সঙ্গীত জগতে? সন্দীহান হয়ে পড়েছিলেন অনেকেই। তবে এত
তাড়াতাড়ি ছন্দপতন হতে পারে না।
কিংবদন্তীকে গানে ফিরতে ভরসা
জুগিয়েছিলেন তাঁর সহশিল্পী থেকে বাংলার আপামর জনগণ। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন
শ্যামল মিত্র। আর এসেই ভাল থাকার ওষুধ হাতে তুলে নেন তিনি। ভক্তদের জন্যই গাইলেন
বিশেষ গান, ‘তোমাদের ভালবাসা ফিরায়ে এনেছে মোরে মরণের পার থেকে’। গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা সেই গানও হিট। প্রথিতযশা শিল্পীর
গলার স্বরে আবারও উদ্বেলিত হন ভক্তরা। কিন্তু ১৯৮৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘটে
নক্ষত্রপতন। কিন্তু তারাদের তো এত সহজে মৃত্যু হয় না। আজও প্রতিটি সঙ্গীতপ্রেমীদের
হৃদয়ে, তাঁর গানের কলিতে অমর হয়ে রয়েছেন শ্যামল মিত্র।