সেনসেশনাল থেকে ঘরোয়া নারী, মানুষ তাঁকে
মহানায়িকা নামে জানে। কারও কাছে তিনি ছিলেন অত্যন্ত দাম্ভিক। কারও কাছে প্রচন্ড
মুডি। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি চলে গিয়েছিলেন মিসেস সেন।
সমসাময়িক অভিনেত্রীরা বলেন সুচিত্রা সেনকে দিদি বলে
সম্বোধন করা মটেই পছন্দ করতেন না তিনি। সকলের কাছে তাই মহানায়িকা হয়েছিলেন ‘মিসেস
সেন’ অথবা ‘ম্যাদাম’। শুধু একজনের কাছে তিনি রমা। আর সেই একজন তাঁর কাছে ‘উতু’। সেখানে আপনি, তুমি ধার
ধারার সাহস পেতো না। বাঙালির প্রথম অন-স্ক্রিন সফল জুটি উত্তম-সুচিত্রার সম্বোধনের
ভাষা ছিল ‘তুই’।
মহানায়ক-মহানায়িকার অনুরাগীরা মনে করেন যেভাবে তাঁরা অন
স্ক্রিন রোম্যান্স করতেন তা বাস্তব জীবনে একে অপরের প্রতি দুর্বলতা না থাকলে
কোনওভাবেই সম্ভব নয়। রোম্যান্টিকতায় ভরা এই জুটিই তো প্রথম শিখিয়েছিল কীভাবে
ভালবাসতে হয়। বছরের পর বছর পরেও তাই তাঁদের সংলাপ কিংবদন্তি, তাঁদের গান প্রেমের ভাষা।
'সাড়ে চুয়াত্তর' দিয়ে প্রথম উত্তম কুমার ও
সুচিত্রা সেনের জুটি বাঁধা। অথচ এই সিনেমায় তাঁরা কিন্তু মুখ্য চরিত্র নন। শুধু
তাই কেন, পোস্টারে কোথাও তাঁদের ছবি নেই। সত্যি বলতে,
এই সিনেমায় তুলসী চক্রবর্তী ও মলিনা দেবীর দাপুটে অভিনয় এবং ভানু
বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মাসিমা, মালপো খামু’র মতো সংলাপ চয়নের কাছে তখন তাঁরা নেহাতই নগন্য। তবুও হীরে চিনতে ভুল হয়নি
সিনেপ্রেমীদের। এই সিনেমার রামপ্রীতি ও রমলা যে ভবিষ্যতে মহানায়ক-মহানায়িকার
শ্রেষ্ঠ জুটি হয়ে উঠবে তা বোধহয় সেদিনই লেখা হয়ে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: নাট্য জগতে ইন্দ্রপতন, প্রয়াত নাট্যব্যক্তিত্ব শাঁওলি মিত্র
আরও পড়ুন: প্রয়াত পণ্ডিত বিরজু মহারাজ
এরপর তো ইতিহাস। ‘শাপমোচন’, ‘হারানো সুর’, ‘শিল্পী’, ‘সাগরিকা’,
‘সবার ওপরে’, ‘বিপাশা’, ‘সপ্তপদী’ একের পর এক হিট পেয়েছে রুপোলি জগৎ। উত্তম কুমার
চিরকালই বলে এসেছেন সুচিত্রা সেন না থাকলে তাঁর উত্তম হয়ে ওঠা হত না। উতুর সঙ্গে
এমন সম্পর্কের পরেও সুচিত্রা সেন চেয়েছেন সিনেমায় তাঁর নাম আগে থাকবে। বারবার
প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছেন সুচিত্রাকে উত্তম, বারবারই না
বলেছেন রমা। অনুপ কুমার একাধিকবার বলেছেন কথাবার্তায় প্রগলভ ছিলেন সুচিত্রা,
চটুল কথা বলতে পারতেন তিনি। সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় নিজে বলেছেন
সুচিত্রা একথা স্বীকার করে গিয়েছেন তিনি হাজার চেষ্টা করেও সাবিত্রীর মতো অভিনয়
করতে পারেননি।
সংসারিক অশান্তিতে জর্জরিত হয়ে সুচিত্রা সেন একসময়
উত্তম কুমারের সঙ্গে অভিনয়ই করতে চাননি। উত্তম অভিনয় করছেন জানলেই সেই সিনেমা থেকে
নিজেকে সরিয়ে নিতেন তিনি। মুডি, অহঙ্কারি এত বিশেষিত হয়েও সুচিত্রা
আদপে সুচিত্রাই থেকে গিয়েছেন। হয়তো সময় থাকতে থাকতে নিজেকে অন্তরালে সরিয়ে
নিয়েছিলেন বলেই উত্তমের ‘প্রিয় বান্ধবী’র মহানায়িকার আসনটি এক চুলও নড়েনি।
FexExcace
Jan 18, 2022 09:53 [IST]