বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব আসতে আর হাতে গোনা কয়েকদিন বাকি।
চারদিকে শুরু হয়ে গিয়েছে পুজোর প্রস্তুতি। মণ্ডপে মণ্ডপে শুরু হয়েছে সেরার সেরা
হওয়ার লড়াই। থিমের আড়ম্বরে শহরের পুজো ছেয়ে গেলেও সাবেকিয়ানার স্বাদ কিন্তু পাওয়া
যায় গ্রাম বাংলার পুজোয়। দক্ষিণ ২৪ পরগণার বেলিয়াচন্ডি গ্রামের গোচরণে ঘোষ বাড়ির
পুজো বহু প্রজন্ম ধরে বয়ে চলেছে সাবেকিয়ানার ঐতিহ্য ও ইতিহাস।
প্রায় আড়াইশো-তিনশো বছর আগে বর্ধমানের ঘোষ বাড়িতে শুরু হয়
দশভুজার আরাধনা। তৎকালীন ঘোষ বাড়ির জমিদার বর্গীদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে চলে আসেন
বেলিয়াচন্ডি গ্রামে। ভাগ্যের পরিহাসে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জমিদারিতে ভাটা পড়ে।
পরিবারের বর্তমান উত্তরসূরী শ্যামল কুমার ঘোষের পিতামহ অঘোর ঘোষের প্রপিতামহ
গোচরণে পুনরায় শুরু করেন মাতৃ আরাধনা। একচালাতেই শুরু হয় দেবীর পুজো। পরবর্তীতে
পরিস্থিতির উন্নতি হলে অঘোর ঘোষ জমিদার বাড়িতে বড়ো ঠাকুর দালান প্রতিষ্ঠা করেন।
কিছুদিনের মধ্যেই নির্দিষ্ট কিছু কারণে
বন্ধ হয়ে যায় পুজো। কালক্রমে তুলসী চরণ ঘোষের আমলে, মূলত তাঁর স্ত্রী
কল্যাণী রানী ঘোষের উদ্যোগেই ফের শুরু হয় দেবীর আরাধনা। তারপর থেকেই বংশপরম্পরায়
চলে আসছে এই পুজো।

জন্মাষ্টমীর পরের দিন কাঠামো পুজোর মাধ্যমে শুরু হয় মায়ের
আবাহন। পরিবারের সদস্যদের মতানুযায়ী, ওই কাঠামোও বহন করছে
দীর্ঘ তিনশো বছরের ঐতিহ্য। ওই কাঠামো মেরামত করে বাড়িতেই তৈরি করা হয় প্রতিমা। ঘোষ
বাড়িতে দেবী রাজনন্দিনী। তাই সোনালী বর্ণের সাজই এ বাড়ির মেয়ের বিশেষত্ব। ষষ্ঠী
থেকে দশমী পর্যন্ত শুদ্ধাচারে সমস্ত নিয়ম মেনে হয় পুজো। প্রত্যেকদিনই ভোগ হিসাবে
মাকে নিবেদন করা হয় শীতলের লুচি, আলুভাজা, নাড়ু, ফল ও মিষ্টান্ন। কোনও রকম ভাতের ভোগ পরিবেশন
করা হয় না ঘোষ বাড়ির দেবী মাকে। আগে বলির প্রচলন থাকলেও বর্তমানে তা বন্ধ হয়ে
গিয়েছে।
আরও পড়ুন: পিতৃগৃহের অমোঘ টানে প্রাচীনত্বের গন্ধ মাখা ঘোষনিবাসে আসেন উমা
আরও পড়ুন: দক্ষিণ রায়ের পুজোর পরেই কৈলাশে পারি দেন মা, রায় বংশের পুজোর ইতিহাসে জড়িয়ে আছে ঠাকুর বাড়িও
গোচরণে ঘোষ বাড়ির পুজো, ‘আটচালার পুজো’ হিসাবেও পরিচিত। সপ্তমী ও অষ্টমীতে আগত সকল দর্শনার্থীকে বিতরণ করা হয়
মায়ের প্রসাদ। পুজোর চারদিন পরিবারের সকলেই মেতে ওঠেন শারদানন্দে। দশমীতে ঘোষ
বাড়ির নিজস্ব পুকুরেই বিসর্জন দেওয়া হয় মাকে। সবমিলিয়ে সাবেকিয়ানা ও বনেদিয়ানার এক
অপরূপ মেলবন্ধন ঘোষ বাড়ির এই পুজো।
ReakSmeat
Jan 09, 2022 12:08 [IST]FexExcace
Jan 07, 2022 10:21 [IST]ententy
Jan 06, 2022 11:47 [IST]